কোমর ব্যাথা এমন একটি শারীরিক সমস্যা যা প্রায় সবাইকে জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ভোগায়। এটা কোনো একদিনে শুরু হয় না, তবে দীর্ঘ সময় ধরে অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। অনেকেই মনে করেন এটি তেমন গুরুতর কিছু নয়, কিন্তু যখন কোমর ব্যাথা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায়, তখন এটি জীবনকে কঠিন করে তোলে।
বসা, হাঁটা, শোয়া, এমনকি ছোটখাটো কাজ করাও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কোমর ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এই ব্লগে আমরা দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথার চিকিৎসা (Treatment of chronic back pain) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এছাড়াও, কোমর ব্যথা নিরাময়ে আকুপাংচারের ভূমিকা এবং কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়ামের উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
কোমর ব্যথা কেন হয়?
কোমর ব্যাথা (Back Pain) বলতে আমরা সাধারণত কোমরের নিচের অংশে ব্যাথাকে বুঝি। এটি কখনও হঠাৎ করে শুরু হয়, আবার কখনও ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদি রূপ নেয়। কোমরের গঠন এবং মেরুদণ্ডের জটিলতার কারণে এখানে যেকোনো ক্ষতি বা আঘাত দ্রুত ব্যাথার সৃষ্টি করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, কোমরের পেশী, হাড়, বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোমর ব্যাথা শুরু হয়। কোমর ব্যাথা সব বয়সের মানুষকেই ভোগাতে পারে, কিন্তু বয়স্কদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। দীর্ঘমেয়াদি রুপ নিলে অবশ্যই যথাযথ কোমর ব্যথার চিকিৎসা (Back pain treatment) গ্রহন করতে হবে।
কোমর ব্যাথা কত ধরনের হয়ে থাকে?
কোমর ব্যাথা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, এর মধ্যে প্রধান দুইটি ধরন নিচে দেওয়া হল :
১. আকস্মিক বা তীব্র কোমর ব্যাথা: হঠাৎ করে যে কোমর ব্যথা দেখা দেয়, সাধারণত সেটা তীব্র কোমর ব্যাথা হিসেবে ধরা হয়। এটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পেশীর আঘাত, ভারি কিছু তোলা, হঠাৎ আঘাত বা পেশীর টান থেকে হতে পারে। তীব্র কোমর ব্যাথা সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়।
২. দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথা: যখন কোমর ব্যাথা ১২ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়, তখন তাকে দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথা বলা হয়। এটি সাধারণত মেরুদণ্ড বা স্নায়ুর সমস্যার কারণে হতে পারে এবং চিকিৎসা না করা হলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা তৈরি করতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথা কি কি কারনে হয়?
দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথার মূল কারণ অনেক হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হল:
মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতা: দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথা মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতা বা বিকৃতি থেকে হতে পারে। মেরুদণ্ডের ডিস্ক, কশেরুকা বা স্নায়ুর সমস্যা এ ধরনের ব্যথার মূল কারণ। প্রল্যাপসড ডিস্ক, হাড় ক্ষয়জনিত রোগ (অস্টিওআর্থ্রাইটিস), স্পন্ডাইলোসিস বা মেরুদণ্ডের বাঁকাচোরা অবস্থা (স্কোলিওসিস) কোমরের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থানে বসে থাকা, ভুল ভঙ্গিমায় ভারী ওজন ওঠানো এবং বয়সজনিত কারণে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে ব্যথা হতে পারে।
পেশীর আঘাত: দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারণ হলো পেশীর আঘাত। পেশীগুলো অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ভুলভাল শারীরিক ভঙ্গি থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। ভারী ওজন তোলা, দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে থাকা বা সঠিকভাবে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ না করা পেশীগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এ ধরনের আঘাত পেশীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে যা সময়ের সাথে সাথে দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যাথায় রূপ নিতে পারে। যদি পেশীগুলোকে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় না ফিরিয়ে আনা হয়, তবে ব্যথা বাড়তে থাকে। তাই নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন, সঠিক ভঙ্গিতে কাজ করা এবং প্রয়োজনীয় সময়ে বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আঘাত বা দুর্ঘটনা: দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা প্রায়শই আঘাত বা দুর্ঘটনার কারণে হতে পারে। কোমরে আঘাত, যেমন হাড় ভাঙা, ডিস্ক ক্ষতি, মাংসপেশির টান বা লিগামেন্টের ছিঁড়ে যাওয়া থেকে এই সমস্যা শুরু হতে পারে। এছাড়া গাড়ি দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া বা ক্রীড়াজনিত আঘাতের কারণে মেরুদণ্ডের ডিস্ক বা নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যথার কারণ হয়। কখনও কখনও, আঘাত বা দুর্ঘটনার পর পরিপূর্ণ সেরে না উঠলে, সময়ের সাথে সাথে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। প্রায়ই এই আঘাতগুলো দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যায় এবং অনেক সময় সারিয়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে।
অস্বাভাবিক জীবনযাপন: দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথার মূল কারণ হতে পারে অস্বাভাবিক জীবনযাপন। আজকের ব্যস্ত জীবনে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং ভুলভাবে ভার বহন করার কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া, সঠিক ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ এবং অনিয়ন্ত্রিত ওজন বৃদ্ধিও কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও দাঁড়ানো, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করলে এই সমস্যার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তাই সচেতন জীবনযাপন এবং প্রয়োজনীয় সময়ে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা প্রতিরোধ (Protect chronic back pain) করা যায়।
মানসিক চাপ: দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ মানসিক চাপ। মানসিক চাপ শরীরের বিভিন্ন পেশী ও স্নায়ুর উপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে মেরুদণ্ডের চারপাশের পেশীগুলো শক্ত হয়ে যায়। এই পেশীগুলোর স্থায়ী টান সৃষ্টি করতে পারে কোমরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা। এছাড়া মানসিক চাপের কারণে ঘুমের সমস্যা, শারীরিক ক্লান্তি এবং শারীরিক কার্যক্রমে অসুবিধা দেখা দিতে পারে, যা কোমর ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা জরুরি।
দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথার লক্ষণ
দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা (chronic back pain) একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেকের জীবনকে বিঘ্নিত করে। এই ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এর লক্ষণও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথা হলে যে লক্ষণগুলো (Symptoms of back pain) দেখা যায়, তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হল:
- কোমরের নিচের অংশে নিরবিচ্ছিন্ন বা প্রচণ্ড ব্যথা
- দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া
- ব্যথার কারণে হাঁটা বা চলাচলে সমস্যা হওয়া
- কোমর থেকে ব্যথা পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়া
- কোমরে শক্তভাব অনুভব করা
- রাতে বা সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় ব্যথা বাড়া
- পিঠ শক্ত হয়ে যাওয়া
- হাঁচি, কাশি বা হাসির সময় ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া
- ভারী কিছু তুলতে অসুবিধা
- কোমরের আকার পরিবর্তন
- সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যথা বেশি অনুভূত হওয়া
- তাপমাত্রার ব্যথা পরিবর্তনের প্রভাব
- কোমরের সাথে অন্যান্য অঙ্গে ব্যথা হওয়া
- Back pain after running
উপরে উল্লেখিত কারণ গুলো দীর্ঘমেয়াদী কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ (Causes of chronic back pain) বলে পরিচিত হয়। এছাড়া দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজের সমস্যা এবং শারীরিক দুর্বলতাও কোমর ব্যথার কারণে হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথার চিকিৎসা
দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমে রোগীর জীবনযাত্রা, ব্যায়াম, ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিবেচনা করা হয়। কিছু কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হল:
ফিজিওথেরাপি: দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথার চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকরী এবং নিরাপদ পদ্ধতি। ফিজিওথেরাপি মাধ্যমে ব্যায়াম, হিট থেরাপি, এবং বৈদ্যুতিক স্টিমুলেশন ব্যবহৃত হয়, যা পেশি শক্তিশালী করে, ব্যাথা কমায় এবং মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। চিকিৎসকরা ব্যক্তিগতভাবে রোগীর অবস্থার উপর ভিত্তি করে থেরাপির পরিকল্পনা করেন, যাতে দীর্ঘস্থায়ী ব্যাথা উপশম হয়। নিয়মিত ফিজিওথেরাপির ফলে মাংসপেশির গঠন উন্নত হয় এবং দৈনন্দিন কাজ সহজ হয়। কোমর ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত ফিজিওথেরাপি শুরু করা জরুরি, কারণ এটি ওষুধ নির্ভরতার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনে এবং দীর্ঘমেয়াদী সুফল দেয়।
ম্যাসাজ থেরাপি: দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথার চিকিৎসায় ম্যাসাজ থেরাপি একটি কার্যকর পদ্ধতি (back pain urgent care)। নিয়মিত ম্যাসাজ করার মাধ্যমে পেশির সংকোচন কমানো, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এই থেরাপি মানসিক প্রশান্তি দেয় এবং স্ট্রেস হ্রাস করে, যা কোমর ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় এবং পেশীর শক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞ ম্যাসাজ থেরাপিস্টের সহায়তায় সঠিক পদ্ধতিতে থেরাপি নিলে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাথার উপশম পাওয়া যায়, যা দৈনন্দিন জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনে।
ইনজেকশন থেরাপি: কিছু ক্ষেত্রে কোমরের ব্যথা নিরাময়ে ইনজেকশন থেরাপি ব্যবহার করা হয়। বিশেষত যাদের মেরুদণ্ড বা স্নায়ুর সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই থেরাপি কার্যকর। তবে এই চিকিৎসার বিশেষ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সর্বদা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ওষুধ: ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) ব্যবহৃত হয়। মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে কখনও কখনও মাংসপেশী শিথিলকারী ওষুধও দেওয়া হয়।
সার্জারি: যখন অন্যান্য সব পদ্ধতি ব্যর্থ হয়, তখন সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে মেরুদণ্ডের ডিস্ক বা হাড়ের কোনো গুরুতর সমস্যা থাকলে, তা সার্জারির মাধ্যমে সমাধান করা হয়। তবে অনেক সময় সার্জারি চিকিৎসায় দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে রোগী কিছু সময় সুস্থ থাকার পর আবার পূর্বের সমস্যা অনুভব করেন। সেই ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
কোমর ব্যথার চিকিৎসায় আকুপাংচারের ভূমিকা
আকুপাংচার একটি বহুল পরিচিত চিকিৎসা পদ্ধতি, যা শরীরের বিভিন্ন পয়েন্টে সূঁচ প্রবেশ করিয়ে ব্যথা কমায়। এটি চীনা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার একটি অংশ। আকুপাংচার পদ্ধতিতে শরীরের প্রাকৃতিক শক্তি বা ‘চি’ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্যথা কমানো হয়। কোমর ব্যথা প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসাবে আকুপাংচার বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
মানব শরীরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইমপালসকে বিভিন্নভাবে অবহিত করার মাধ্যমে আকুপাংচার কোমর ব্যথা এবং অন্যান্য ব্যথা নিবারণে যথেষ্ট কার্যকর বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। আকুপাংচার এর মাধ্যমে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায় এবং শরীর অধিক কার্যক্ষম হয়। এছাড়া এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আকুপাংচার শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এক ধরণের উদ্দীপনা তৈরী করে। যার কারণে ব্যথাযুক্ত স্থান গুলির মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরী হয় এবং ব্যথা ধীরে ধীরে প্রশমিত হতে থাকে। সুতরাং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত আকুপাংচার বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে।
আকুপাংচার চিকিৎসার মূল ভিত্তি হলো শরীরের মাংসপেশি, ব্লাড ভেসেল, রক্তনালী, ইত্যাদি। আকুপাংচার পদ্ধতিতে রোগীর কশেরুকার যে লেভেলে সমস্যা আছে, আকুপাংচার পদ্ধতিটি সেই স্থানের আশেপাশে অবস্থিত চ্যানেলগুলোকে এর মাধ্যমে ইলেকট্রিক শক দিয়ে উদ্দীপিত করে। এতে সেই স্থানে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং বিভিন্ন রকম হরমোন নিঃসরণ হয়। এর ফলে উক্ত স্থানের ব্যথা উপশম হতে থাকে। আকুপাংচার পদ্ধতি প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে ব্যথা জাতীয় বিভিন্ন রোগের উপশম পাওয়া যায়।
কোমর ব্যাথা চিকিৎসায় আকুপাংচার অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে, বিশেষত দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার ক্ষেত্রে। আকুপাংচার পদ্ধতিতে মেরুদণ্ড এবং কোমরের পেশীর নির্দিষ্ট পয়েন্টে সূঁচ প্রবেশ করিয়ে শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তি ব্যালেন্স করা হয়। এতে পেশীর চাপ কমে এবং ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের আকুপাংচার চিকিৎসার জন্য যতগুলি বিশেষায়িত সেন্টার রয়েছে তার মধ্যে দক্ষ এবং প্রসিদ্ধ হলো শশী হাসপাতাল। শশী হাসপাতাল এর আকুপাংচার বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা এই চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়, যা দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথার রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এখানে প্রখ্যাত পেইন ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ এবং আকুপাংচার স্পেশালিস্ট Dr. Shahidul Islam এর নেতৃত্বে আকুপাংচার চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশে আকুপাংচারের এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন তাঁর হাত ধরেই। এ ছাড়া আকুপাংচার একটি সম্পূর্ণ ওষুধ বিহীন চিকিৎসার পদ্ধতি। যেখানে আকুপাংচার ফিজিওথেরাপি এবং কিছু কম্বিনেশন চিকিৎসার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথার চিকিৎসা (Chronic back pain treatment) করা হয় এবং সঠিক লাইফস্টাইল গ্রহণ করে জীবনযাপন করলে দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা থেকে সুস্থতা লাভ করা সম্ভব।
কোমর ব্যাথা কমানোর ব্যায়াম
কোমর ব্যাথা চিকিৎসার জন্য সঠিক ব্যায়াম (Exercise for back pain treatment) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম কোমরের পেশীকে শক্তিশালী করে এবং মেরুদণ্ডকে স্থিতিশীল রাখে। কিছু কার্যকর ব্যায়াম হল:
পেলভিক টিল্ট: পিঠে শুয়ে হাঁটুকে বাঁকা করে পায়ের তলায় মাটিতে রাখুন। কোমরটি মাটির দিকে টেনে আনুন এবং কিছু সেকেন্ড ধরে রাখুন। এটি কোমরের পেশী শক্তিশালী করে। পিঠের পেশী এবং কোমরের স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য এই ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী।
ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ: মাটিতে চার পায়ে দাঁড়িয়ে হাত এবং হাঁটু দিয়ে শরীরের উপরিভাগকে মুড়ে নিন। শ্বাস নিন এবং মাথা এবং পিঠ উঁচু করুন (কাউ পজ), তারপর শ্বাস ছাড়ুন এবং পিঠ নিচে নামিয়ে আনুন (ক্যাট পজ)। এটি কোমরের নমনীয়তা বাড়ায়।
স্ট্রেইট লেগ রেইজ: স্ট্রেইট লেগ রেইজ কোমরের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। পিঠ সমান করে শুয়ে, দুই পা সোজা রেখে একসাথে উপরে তুলুন। ৫-১০ সেকেন্ড রাখুন এবং ধীরে ধীরে নামান। এটি কোমরের ব্যথা উপশমে কার্যকর।
হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ: কোমর ব্যাথা কমানোর জন্য হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ একটি কার্যকরী ব্যায়াম। এটি আপনার পেছনের পা এবং কোমরের পেশীগুলোকে টানতে সাহায্য করে, ফলে পেশীর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে এবং ব্যাথা কমে। এছাড়া হ্যামস্ট্রিং পেশী স্ট্রেচ করলে কোমরের পেশীতে টান কমে এবং ব্যথা প্রশমিত হয়। নিয়মিত এই স্ট্রেচ করা অভ্যাসে পরিণত করুন।
প্রতিদিনের জীবনযাত্রার সাথে এই ব্যায়ামগুলোকে যুক্ত করলে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কোমর ব্যথা হলে যে সকল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে
কোমর ব্যথা অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপর। আনুমানিক প্রায় ৭০ শতাংশ লোকের ক্ষেত্রে এই ব্যথা আছে। এটি একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক যা অনেকের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। কোমর ব্যথা সারানোর জন্য আমাদের জীবনযাপনের পরিবর্তন করা খুবই জরুরী। বেশ কিছু বাধানিষেধ মেনে চলতে হয়। চলুন জেনে নেই কোমর ব্যথা হলে কি করা যাবে না।
- এক ভাবে বেশি সময় বসে থাকা যাবে না
- নরম ম্যাট্রেসে বসা ঘুমানো যাবে না
- কোমরকে বেশি নড়াচড়া কাজ করা যাবে না
- অতিরিক্ত সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করা যাবে না
পরিশেষে
দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথা একটি জটিল এবং কষ্টকর সমস্যা হলেও সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ব্যথার চিকিৎসার জন্য সঠিক পদ্ধতি নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আকুপাংচার, ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম এবং কম্বিনেশন চিকিৎসার মাধ্যমে ঔষধবিহীন দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যাথা চিকিৎসা করা যায়।
Dr. Shahidul Islam বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ। সেই সাথে Pain and Paralysis ডাক্তার হিসেবেও ব্যপক সুনাম অর্জন করেছেন। বাংলাদেশে ঔষধ বিহীন চিকিৎসা আকুপাংচার এর ব্যবহারকে এগিয়ে নিতে ব্যপক ভূমিকা পালন করছেন। তার চিকিৎসায় অসংখ্য রোগী কোমর ব্যথা থেকে সুস্থ্যতা লাভ করেছেন। তিনি যেকোন ধরনের ব্যথার চিকিৎসায় সফলতার খ্যাতি অর্জন করেছেন। Dr. Shahidul Islam বর্তমানে শশী হাসপাতালে ভিজিটিং কনসালট্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত আছেন। মূলত তার তত্বাবধানে দেশসেরা আকুপাংচার চিকিৎসা প্রদান করা হয়।