হঠাৎ প্যানিক অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়

আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রায় মানসিক চাপ একটি অতি পরিচিত বিষয়। কাজের চাপ, সম্পর্কের জটিলতা, অর্থনৈতিক চাপ ইত্যাদিসহ আরো বিভিন্ন কারণে অনেকেই প্রতিদিন মানসিক চাপে ভুগছেন। এই মানসিক চাপ থেকে অনেক সময় হঠাৎ প্যানিক অ্যাটাক ঘটে। অনেকেই হয়তো জানেন না কীভাবে এই প্যানিক অ্যাটাক থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বা তাৎক্ষণিক করণীয় কী। এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত জানবো প্যানিক অ্যাটাক সম্পর্কে এবং হঠাৎ প্যানিক অ্যাটাক হলে কীভাবে তা মোকাবেলা করা যায়।

sudden-panic-attack

প্যানিক অ্যাটাক কি?

প্যানিক অ্যাটাক হল এক ধরনের আকস্মিক মানসিক এবং শারীরিক প্রতিক্রিয়া যা তখন ঘটে যখন কোনো ব্যক্তি অত্যন্ত ভীত বা উদ্বিগ্ন হয়। প্যানিক অ্যাটাক সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য ঘটে, তবে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। প্যানিক অ্যাটাকের সময় মানুষ হঠাৎ করে অস্বস্তি অনুভব করে এবং হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়, শরীরে ঘাম জমে, শ্বাসকষ্ট হয়, এবং মনে হয় যেন কিছু ভয়ানক ঘটতে চলেছে। এই ধরনের অনুভূতি প্রায়শই অকারণেই হয়ে থাকে, কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তি এই সময়ে মারাত্মক আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

প্যানিক অ্যাটাক কেন হয়?

প্যানিক অ্যাটাকের প্রধান কারণ হলো মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ। তবে এটি কিছু জৈবিক কারণেও হতে পারে। মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে থাকা রাসায়নিক ভারসাম্যের পরিবর্তন, অতিরিক্ত কফি বা নিকোটিন গ্রহণ, অত্যধিক মানসিক চাপ, এবং কোনো শারীরিক সমস্যা থেকেও প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, যেমন কোনো দুর্ঘটনা বা বড় ট্রমা, প্যানিক অ্যাটাকের জন্য দায়ী হতে পারে।

প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ

প্যানিক অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

  • হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যাওয়া 
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া
  • বুকের মধ্যে চাপ অনুভব করা
  • শরীর ঘেমে যাওয়া
  • মাথা ঘোরা
  • হঠাৎ করে কাঁপা বা শিরশির অনুভূতি 
  • ভয়ানক কিছু ঘটবে বলে মনে হওয়া

এই লক্ষণগুলো সাধারণত কিছু সময়ের জন্য থাকে এবং হঠাৎ করে আসে। অনেক সময় মানুষ মনে করেন যে তারা হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কোনো মারাত্মক শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু এটি মূলত মানসিক কারণেই ঘটে।

কিভাবে প্যানিক অ্যাটাক ঘটে?

প্যানিক অ্যাটাক সাধারণত মস্তিষ্কের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। যখন আমাদের মস্তিষ্ক মনে করে যে আমরা কোনো বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি, তখন এটি আমাদের শরীরকে বিপদ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। এটি হল “ফাইট বা ফ্লাইট” প্রতিক্রিয়া, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ে শিকারী প্রাণীর সামনে বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আজকের দিনে সেই বিপদগুলোর স্থান দখল করেছে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বা শারীরিক পরিশ্রমের কারণে মস্তিষ্ক অযথা আমাদের শরীরকে বিপদের সংকেত দেয়, যার ফলশ্রুতিতে প্যানিক অ্যাটাক ঘটে। 

ঘন ঘন প্যানিক অ্যাটাক কেন হয়?

যদি কারো ঘন ঘন প্যানিক অ্যাটাক ঘটে, তাকে “প্যানিক ডিজঅর্ডার” বলা হয়। এটি তখন হয় যখন একজন ব্যক্তি নিয়মিত প্যানিক অ্যাটাকের মুখোমুখি হন এবং এতে তাদের দৈনন্দিন জীবনব্যবস্থায় প্রভাব পড়ে। ঘন ঘন প্যানিক অ্যাটাকের কারণ হিসেবে থাকতে পারে:

  • মাদকাসক্তি
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ
  • পারিবারিক ইতিহাসে মানসিক রোগ থাকা
  • ব্যক্তিগত জীবনের কোনো বড় পরিবর্তন
  • অতীতের কোনো ট্রমাটিক ইভেন্ট

হঠাৎ প্যানিক অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়

শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করা: প্যানিক অ্যাটাকের সময় শ্বাস দ্রুত হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন, পাঁচ সেকেন্ড ধরে রাখুন, তারপর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। এটি শরীরকে শান্ত করতে সাহায্য করে।

জমে থাকা শক্তি নিঃসরণ করুন: প্যানিক অ্যাটাকের সময় শরীরের ভেতরে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত হয়। এই শক্তি নিঃসরণের জন্য কিছু শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন, যেমন হাঁটা বা হালকা দৌড়।

ফোকাস পরিবর্তন করুন: প্যানিক অ্যাটাকের সময় মন অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। নিজেকে অন্য কোনো সহজ কাজে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করুন। কোনো মজার ভিডিও দেখুন, গান শুনুন, বা কারো সাথে কথা বলুন। অনেক সময় প্যানিক অ্যাটাকের কারণ হতে পারে আশেপাশের পরিবেশ। যদি কোনো স্থান বা পরিবেশে থেকে প্যানিক অ্যাটাক অনুভূত হয়, সেখান থেকে বের হয়ে আসুন এবং একটি শান্ত জায়গায় চলে যান।

পানি পান করুন: প্যানিক অ্যাটাকের সময় শরীরে ঘাম জমতে পারে, ফলে শরীরের পানি কমে যেতে পারে। সেই মুহূর্তে এক গ্লাস পানি পান করুন।

প্যানিক অ্যাটাক পরবর্তী লাইফস্টাইল

প্যানিক অ্যাটাক থেকে মুক্তি পাওয়ার পর লাইফস্টাইলে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে যেন এটি পুনরায় না ঘটে। নিয়মিত ব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত ঘুমানো, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মাঝে কিছুটা সময় নিজের জন্য রেখে ধ্যান বা যোগব্যায়াম করা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

প্যানিক অ্যাটাক রোধে করনীয় ঘরোয়া টিপস

১. মেডিটেশন: প্রতিদিন মাত্র ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন করলে মানসিক চাপ কমে এবং প্যানিক অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।

২. যোগব্যায়াম: যোগব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ও মনের শিথিলতা বজায় রাখা যায়, যা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম: নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানসিক চাপ বাড়ে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি।

৪. ক্যাফেইন কমিয়ে দিন: ক্যাফেইন মানসিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে, তাই চা, কফি, এবং এনার্জি ড্রিংক কম পান করুন।

৫. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখুন: পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের সাথে আপনার অনুভূতিগুলো শেয়ার করুন।

মনে রাখবেন 

প্যানিক অ্যাটাক একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা, যা সঠিক জ্ঞান ও ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু সঠিক পদ্ধতি এবং ঘরোয়া টিপস অনুসরণ করলে প্যানিক অ্যাটাক থেকে মুক্ত থাকা যায়। মনকে শান্ত রাখার জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম এবং একটি হেলদি লাইফস্টাইল বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের অন্যতম পেইন ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ ডা. এস. এম. শহীদুল ইসলাম আকুপাংচার চিকিৎসার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের ঔষধ বিহীন চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Receive the latest news

Subscribe To My Weekly Newsletter

Get notified about new articles