কোমর ব্যথা এমন একটি সমস্যা যা প্রায় সকল বয়সের মানুষকেই কষ্ট দেয়। সাধারণত আমরা মনে করি কোমর ব্যথা বয়স্কদের সমস্যা, কিন্তু আধুনিক জীবনের অভ্যস্ততার কারণে আজকাল অল্প বয়সেও অনেকেই এই সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কোমর ব্যথার কারণ ও এর চিকিৎসার কৌশল সম্পর্কে সঠিকভাবে জানলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
বিশেষ করে বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা বেশি যন্ত্রণাদায়ক হয়। সাধারণত ব্যথা নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন ব্যথানাশক ঔষধ ও অপারেশন এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে ঔষধ ও অপারেশন ছাড়াও কোমর ব্যথা সারানো সম্ভব। আকুপাংচার চিকিৎসা ও কিছু শারীরিক ব্যয়াম এই ব্যথা নিরাময়ে ভালো কাজ করে। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব অল্প বয়সে কোমর ব্যথার কারণ, লক্ষণ এবং এর চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি।
কোমর ব্যথা কি?
কোমর ব্যথা বলতে সাধারণভাবে কোমরের নিচের অংশে অনুভূত ব্যথাকে বোঝায়। এই ব্যথা কোমরের হাড়, মাংসপেশি, লিগামেন্ট, ডিস্ক ইত্যাদির যেকোনো সমস্যার কারণে হতে পারে। কোমর ব্যথা বিভিন্ন মাত্রার হতে পারে, এটি হালকা থেকে শুরু করে তীব্র হতে পারে। মাঝে মাঝে ব্যথা শরীরের অন্যান্য অংশে যেমন পা বা গোঁড়ালিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অল্প বয়সে কোমর ব্যথা কেন হয়?
অল্প বয়সে কোমর ব্যথার কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে:
লাইফস্টাইল ও অভ্যাস: অল্প বয়সে কোমর ব্যথা সাধারণত অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও অভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা, সঠিক ভঙ্গিমায় না বসা বা হাঁটা, ভারী ওজন তুলতে গিয়ে পেশির ক্ষতি হওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। এছাড়াও, অতিরিক্ত মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহারে সামনে ঝুঁকে থাকার ফলে মেরুদণ্ডের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। আধুনিক জীবনে কম শারীরিক কার্যক্রম এবং দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার ফলে কোমর ব্যথা হতে পারে। সঠিক পুষ্টি এবং পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাবও কোমরের ব্যথার একটি বড় কারণ। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গিমায় বসা এবং ভারী ওজন তোলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহারের অতিরিক্ত সময়: কোমর ব্যথার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহারের সময় দীর্ঘক্ষণ ভুল ভঙ্গিতে বসা। অতিরিক্ত সময় ধরে একই অবস্থানে থাকায় পেশীগুলোতে চাপ পড়ে এবং মেরুদণ্ডের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহারের কারণে কোমরের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে এবং ব্যথা হতে পারে। নিয়মিত বিরতি এবং সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
অস্বাস্থ্যকর খাবার: অল্প বয়সে কোমর ব্যথার একটি বড় কারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত চর্বি ও চিনি সমৃদ্ধ খাবার শরীরের ওজন বাড়ায়, যা মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ ফেলে। এছাড়া, অপর্যাপ্ত পুষ্টির কারণে হাড় এবং পেশির গঠন দুর্বল হয়, ফলে কোমরে ব্যথা শুরু হয়। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবার খাওয়ার কারণে কোমরের সমস্যা বাড়তে পারে। সঠিক পুষ্টি গ্রহণই সুস্থ কোমরের মূল চাবিকাঠি।
অতিরিক্ত ওজন: অল্প বয়সে কোমর ব্যথার একটি সাধারণ কারণ হলো অতিরিক্ত ওজন। যখন শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখন মেরুদণ্ড এবং কোমরের হাড়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। স্থূলতা দীর্ঘমেয়াদে মেরুদণ্ডের ক্ষতি করতে পারে, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা কোমর ব্যথা প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
অনিয়মিত শরীরচর্চা: কোমর ব্যথা হওয়ার আরো একটি প্রধান কারণ হলো অনিয়মিত শরীরচর্চা। যখন শরীরের পেশীগুলি শক্ত হয় না এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা হয় না, তখন কোমরের অংশে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এতে করে কোমর ব্যথা দেখা দিতে পারে। শরীরচর্চার মাধ্যমে পেশীগুলিকে শক্তিশালী করা এবং নমনীয়তা বজায় রাখা কোমরের ব্যথা প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোমর ব্যথার লক্ষণ
- কোমর ব্যথার লক্ষণগুলো অনেক বৈচিত্র্যময় হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- কোমরের নিচে বা পিঠে ব্যথা
- দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে বা দাঁড়ালে ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া
- ব্যথার সাথে সাথে কোমরের মাংসপেশিতে টান বা খিঁচুনি
- পা এবং গোঁড়ালিতে অসস্তি বা ঝিঁ ঝিঁ ধরা
- ঘুমের সময় ব্যথার কারণে অসুবিধা হওয়া
কোমর ব্যথার সাধারন কারণ
কোমর ব্যথার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যেমন:
মাংসপেশির টান বা খিঁচুনি: কোমর ব্যথার একটি সাধারণ কারণ হল মাংসপেশির টান বা খিঁচুনি। ভারী কাজ, অনিয়মিত অবস্থানে বসা বা শোয়া, কিংবা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের ফলে কোমরের পেশিতে টান ধরে। এছাড়া অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, ভুলভাবে কিছু তোলার কারণে কোমরের মাংসপেশি টানতে পারে।
ডিস্ক সমস্যার কারণে: কোমর ব্যথার একটি সাধারণ কারণ হলো ডিস্কের সমস্যা। মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী ডিস্কগুলোর স্থানচ্যুতি বা ক্ষয়জনিত কারণে নার্ভে চাপ পড়ে, যা কোমরে ব্যথার সৃষ্টি করে। এই সমস্যাটি বিশেষ করে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়তে পারে এবং দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা ভারী কাজ করার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ডিস্কের মধ্যে চাপ সৃষ্টি হলে ডিস্ক বেরিয়ে পড়ে যা কোমরের ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
লিগামেন্টের ক্ষতি: কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হলো লিগামেন্টের ক্ষতি। এটি মূলত অতিরিক্ত ভার উত্তোলন, ভুল অঙ্গবিন্যাস, বা হঠাৎ আঘাতের কারণে হতে পারে। লিগামেন্টে ক্ষতি হলে কোমরের স্থিতিশীলতা কমে যায়, যা তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে সমস্যা হতে পারে।
পোশ্চার সমস্যা: কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হল মেরুদণ্ডের পোশ্চার সমস্যা। দীর্ঘ সময় ধরে ভুলভাবে বসা বা শোওয়ার ফলে মেরুদণ্ডের উপর চাপ পড়ে, যা কোমরে ব্যথার সৃষ্টি করে। সঠিক পোশ্চার বজায় রাখা জরুরি, কারণ এটি ব্যথা কমায় এবং মেরুদণ্ডকে সুরক্ষিত রাখে।অন্যান্য রোগ: কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা। অতিরিক্ত ওজন, আর্থ্রাইটিস, বয়সজনিত সমস্যা এবং বাত রোগও কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে। এ সমস্যাগুলি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হতে পারে।
কোমর ব্যথার ঘরোয়া চিকিৎসা
কোমর ব্যথার জন্য ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা প্রক্রিয়া রয়েছে যা কিছুটা উপশম দিতে পারে:
আইস থেরাপি (Ice Therapy): কোমর ব্যথার দ্রুত উপশমের জন্য আইস থেরাপি খুবই কার্যকর। ব্যথা হওয়া স্থানে বরফের প্যাক দিন এবং ১৫-২০ মিনিট ধরে রাখুন। এই পদ্ধতি প্রদাহ কমাতে এবং ব্যথা শামলাতে সহায়ক। দিনে ২-৩ বার এই থেরাপি প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে, সরাসরি ত্বকে বরফ লাগাবেন না; বরফের প্যাক বা তোয়ালে দিয়ে ব্যবহার করুন। দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হট কম্প্রেস থেরাপি (Hot-compress): গরম কম্প্রেস থেরাপি কোমর ব্যথার উপশমে কার্যকরী হতে পারে। একটি পরিষ্কার কাপড় গরম পানি বা গরম জলপট্টি দিয়ে ভিজিয়ে কোমরের ব্যথাযুক্ত স্থানে প্রলেপ দিন। এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং পেশির টান কমায়। দিনে ২-৩ বার ১৫-২০ মিনিটের জন্য হট কম্প্রেস ব্যবহার করুন। তবে, যদি ব্যথা ক্রমশ বাড়ে বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ: কোমর ব্যথা কমাতে স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিন সকালে কোমরের পেশী হালকা স্ট্রেচিং করা উচিত। এর জন্য প্রথমে চেয়ারে বসে সোজা হন এবং ধীরে ধীরে সামনের দিকে ঝুঁকুন। এরপর কোমরের দিকে হাত প্রসারিত করুন এবং ১৫-২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এই এক্সারসাইজটি দিনে ২-৩ বার করা যেতে পারে। নিয়মিত স্ট্রেচিং করলে কোমরের পেশী নমনীয় থাকে এবং ব্যথা কমে আসে।
শরীরচর্চা: কোমর ব্যথা কমাতে নিয়মিত শরীরচর্চা অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন এবং কোমরের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সঠিক ব্যায়াম করুন। পিঠের উপর শুয়ে কাঁধের নিচে একটি তোষক রেখে পা তুলুন, এটি কোমরের পেশী মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়া, কোমরের নিচের অংশের স্ট্রেচিংও জরুরি। সঠিক শরীরচর্চা কোমরের ব্যথা কমাতে সহায়ক।
সঠিক বসার অভ্যাস: কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক বসার অভ্যাস অপরিহার্য। কম্পিউটার বা টিভির সামনে বসার সময় সোজা বসুন, পিঠের সমর্থনে চাদর ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত বিরতিতে উঠুন। এভাবে কোমরের চাপ কমবে এবং ব্যথা হ্রাস পাবে।
কোমর ব্যথার ঔষধ বিহীন চিকিৎসা
সাধারন চিকিৎসায় কোমর ব্যথার নিরাময় না হলে অনেকের ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে আকুপাংচার চিকিৎসার মাধ্যমে কোন প্রকার ঔষধ ও অপারেশন ছাড়া কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আকুপাংচার একটি চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি।
এই পদ্ধতিতে কোন প্রকার ঔষধ এর ব্যবহার করা হয় না। বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিয়ে আসছে দেশসেরা আকুপাংচার স্পেশালিষ্ট ডা. এস. এম. শহিদুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা ব্যথা নিরাময় হাসপাতাল SUO XI Hospital (Acupuncture) এ চিকিৎসা প্রদান করছেন।
কোমর ব্যথা হলে কি করা যাবে না
কোমর ব্যথা অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপর। আনুমানিক প্রায় ৭০ শতাংশ লোকের ক্ষেত্রে এই ব্যথা আছে। এটি একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক যা অনেকের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। কোমর ব্যথা সারানোর জন্য আমাদের জীবনযাপনের পরিবর্তন করা খুবই জরুরী। বেশ কিছু বাধানিষেধ মেনে চলতে হয়। চলুন জেনে নেই কোমর ব্যথা হলে কি করা যাবে না।
- এক ভাবে বেশি সময় বসে থাকা যাবে না
- নরম ম্যাট্রেসে বসা ঘুমানো যাবে না
- কোমরকে বেশি নড়াচড়া কাজ করা যাবে না
- অতিরিক্ত সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করা যাবে না
উপরের বাধানিষেধ গুলো মেনে চললেই এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
পরিশেষে
অল্প বয়সে কোমর ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ঘরোয়া চিকিৎসা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করলে কোমর ব্যথার সমস্যা সহজেই মোকাবিলা করা যায়। তাই, সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে কোমরের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশের সেরা ব্যথা নিরাময় ডাক্তার ডা. এস. এম. শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে ঔষধ বিহীন কোমর ব্যথার চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ব্যথার সমস্যা নিয়ে তার চিকিৎসায় সুস্থ্য হচ্ছেন অনেকেই। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন।