ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগটি সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে দেখা যায়। প্রতি বছর, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ে, বিশেষ করে বর্ষাকালে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি, কারণ এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। এই ব্লগে আমরা ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে করনীয় ও সতর্কতা সম্পর্কে জানব।
ডেঙ্গু কি?
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এই ভাইরাসটি চারটি ভেরিয়েন্টে বিভক্ত: ডেঙ্গু ১, ২, ৩, এবং ৪। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করলে তা সাধারণত ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ করে। ডেঙ্গু জ্বর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি রক্তের প্লেটলেট কমিয়ে দেয়, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এখন ডেঙ্গু হলে সামান্য জ্বরেই হার্ট, কিডনি ও বেইন আক্রান্ত হচ্ছে। সাথে রোগী দ্রুত শকে যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকেই ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে আছেন। বর্তমানে গ্রামের চেয়ে শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ
ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশা বাহিত ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ব্যাধি। এই রোগের বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে যা দেখে এই রোগের প্রভাব সম্পর্কে জানা যায়। নিম্নে তা প্রদান করা হলঃ
- হঠাৎ ১০৪-১০৫ ডিগ্রি জ্বর সাথে মাথা ব্যথা।
- চোখে বা চোখের পিছনে ব্যথা বা আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হওয়া।
- মাংসপেশী ও হাড়ের সংযোগস্থলে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া।
- শরীরের চামড়ায় লালচে ছোপ বা র্যাশ ওঠা।
- বমিভাব, বমি হওয়া ও খাওয়ার অরুচি হওয়া।
- ব্রাশ করতে গিয়ে মুখ ও দাঁতের গোড়া এবং নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
- ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হওয়া।
- চার-পাঁচদিনের মধ্যে জ্বর সেরে যাওয়া।
- প্ল্যাটিলেট কমে যাওয়া।
তবে এইবারের ডেঙ্গু জ্বরের চিত্রটা অনেকটাই ভিন্ন। দেখা যাচ্ছে, জ্বরের তাপমাত্রা খুব বাড়ছে না, শরীরের ব্যথাও তেমন হচ্ছে না। সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা। অথচ এক দুইদিন পর শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর পাল্স পাওয়া যায় না, ব্লাড প্রেসার কমে যায়, প্রভাব হয় না, কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি রোগী অজ্ঞানও হয়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলি সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে দেখা দেয় এবং প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে শিথিল হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর মৃদু বা গুরুতর ফর্ম দেখা যেতে পারে, যা জীবনঘাতীও হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ হলো ডেঙ্গু ভাইরাস, যা এডিস মশার (Aedes mosquito) মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। এডিস মশা, বিশেষ করে এডিস ইজিপ্টাই (Aedes aegypti) এবং এডিস অ্যালবোপিক্টাস (Aedes albopictus) প্রজাতির মশা, দিনের বেলা কামড়ায় এবং এদের কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি প্রধান সেরোটাইপ রয়েছে: DEN-1, DEN-2, DEN-3, এবং DEN-4। একবার কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হলে, সে ওই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে, কিন্তু অন্যান্য সেরোটাইপে পুনরায় আক্রান্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর সংক্রমণের প্রক্রিয়া:
মশার কামড়: সংক্রামিত এডিস মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে ডেঙ্গু ভাইরাস তার শরীরে প্রবেশ করে।
ভাইরাসের বৃদ্ধি: ভাইরাসটি রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরীরের বিভিন্ন কোষে আক্রমণ শুরু করে।
লক্ষণগুলির উদ্ভব: সংক্রমণের ৪-১০ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলি দেখা দেয়, যেমন উচ্চ তাপমাত্রা, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি।
এছাড়া, ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে যখন একজন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে মশার মাধ্যমে ভাইরাস প্রবাহিত হয়।
বাংলাদেশে কখন ডেঙ্গুর উপদ্রব বেশি হয়
বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষাকাল এবং মৌসুমী বৃষ্টির সময় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, কারণ এই সময় এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায়। তাই, এই সময় বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করা উচিত।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত:
মশার প্রজনন স্থান দূর করা: মশার প্রজননের জন্য জমে থাকা পানির স্থানগুলো যেমন ফুলের টব, কলস, এবং অন্যান্য স্থান পরিষ্কার করা।
মশারি ব্যবহার করা: রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করে নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
পোশাকের প্রতি সচেতনতা: যতটা সম্ভব প্রায় সবসময় দীর্ঘ হাতা এবং প্যান্ট পরিধান করা। এই ধরনের পোশাক মশার কামড় থেকে কিছুটা রক্ষা করতে পারে।
মশার তাড়ক ব্যবহার করা: ঘরে বা বাইরে যাওয়ার সময় মশার তাড়ক ব্যবহার করা, যা মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে সহায়ক।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা: কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
১. ফুলের টব, এসি, ফ্রিজের নিচসহ বাসার যেকোনো স্থানের আবদ্ধ পানি নিয়মিত অপসারণ করুন।
২. আপনার চারপাশের জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করুন, প্রয়োজনে জমে থাকা পানিতে ব্লিচিং পাউডার ছিটান।
৩. পানি জমে থাকতে পারে এমন জিনিসপত্র উল্টে রাখুন। এছাড়া পরিত্যাপ্ত টায়ার, ডাব/নারিকেলের খোসা, প্লাস্টিকের বোতল ও আশে-পাশের পড়ে থাকা পাত্রের জমা পানি ৩ দিনের মধ্যে ফেলে দিন।
৪. দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন।
৫. জানালাতে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করুন।
৬. শরীরের অনাবৃত স্থানে মশা নিবারক ক্রিম ব্যবহার করুন।
৭. মশা নিধনের ওষুধ, স্প্রে কিংবা কয়েল ব্যবহার করুন।
৮. পাতলা কিংবা ঢোলা পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকুন।
৯. শিশু এবং বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নিয়ে নিরাপদে থাকুন।
১০. আপনার বাড়ির আঙ্গিনা ও আশ-পাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
ডেঙ্গুর সতর্কতা
ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে জ্বর সেরে যাওয়ার পরবর্তী সময় খুবই ভয়ঙ্কর। এসময় তীব্র পেট ব্যথা, বার বার বমি, পাতলা পায়খানা অথবা শরীরের যেকোনো স্থান থেকে রক্তক্ষরণ, রোগীর শরীর ও হাত-পা ঠা-া হয়ে গেলে, কিছুই খেতে না পারলে এবং শরীর অনেক দূর্বল ও হাঁটাচলা করতে কষ্ট হলে অতি দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
পরিশেষে
ডেঙ্গু একটি গুরুতর রোগ, যা সময়মতো সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয় করে আমাদের সবাইকে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে এই সংগ্রামে আমাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সঠিক জ্ঞান এবং সচেতনতার মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং আমাদের পরিবার এবং সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।
বাংলাদেশের অন্যতম আকুপাংচার ও পেইন এন্ড প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ ডা. এস. এম. শহীদুল ইসলাম ঔষধ বিহীন চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন। বিভিন্ন রকমের ব্যথার চিকিৎসায় ব্যপক সফলতা অর্জন করেছে। তিনি বাংলাদেশের সেরা ব্যথার ডাক্তার (Best Pain Doctor) হিসেবেও পরিচিত। দেশ সহ বিদেশেও ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন Dr. Shahidul Islam। বর্তমানে তিনি শান্তিনগর শশী হাসপাতালে চীফ ভিজিটিং কনসাল্টেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।