তীব্র গরম থেকে বাঁচতে কার্যকরী উপায়

গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত তাপমাত্রা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষত বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে তীব্র গরমে সুস্থ থাকা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা, যেমন মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ডিহাইড্রেশন, ত্বকের সমস্যা প্রভৃতি দেখা যায়। এই সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ।

এই তীব্র গরমে নিজেকে সুস্থ রাখা জরুরি। গরমে সুস্থ থাকতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ধরনের সমস্যাগুলি এড়াতে তীব্র গরম থেকে বাঁচার জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আসুন, তীব্র গরম থেকে বাঁচার উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

তীব্র গরমে সাধারণত যে ঝুঁকিগুলো দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা)

 তীব্র গরমে ডিহাইড্রেশন একটি গুরুতর ঝুঁকি। গরমের দিনে ঘাম বেশি হওয়ায় শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ ও পানির পরিমাণ কমে যায়। ফলে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা শারীরিক দুর্বলতার অন্যতম কারণ। শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা এই ঝুঁকির প্রতি বিশেষ সংবেদনশীল। পর্যাপ্ত পানি পান করা, শীতল পরিবেশে থাকা এবং স্যালাইন যুক্ত পানীয় গ্রহণ করা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে কার্যকর। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলাই এর সঠিক সমাধান।  

  • হিটস্ট্রোক

গরমের তীব্রতায় হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি একটি জীবনহানিকর অবস্থা যেখানে শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। গরম আবহাওয়া, অধিক পরিশ্রম, এবং জলশূন্যতা এর প্রধান কারণ। হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলোতে তীব্র মাথাব্যথা, বমি, তৃষ্ণা, এবং বিভ্রান্তি অন্তর্ভুক্ত। দ্রুত চিকিৎসা না হলে হিটস্ট্রোকের ফলে গুরুতর শারীরিক সমস্যা হতে পারে। 

  • ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা

তীব্র গরমে ত্বক নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। ঘামের কারণে ত্বকে র‍্যাশ, অ্যালার্জি, এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। সূর্যের অতিরিক্ত UV রশ্মি ত্বকে পোড়া, বয়সের ছাপ এবং ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যালার্জি বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনও হতে পারে। তাই গরমে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে সানস্ক্রিন ব্যবহার, পর্যাপ্ত জলপান এবং সঠিক পরিচর্যা জরুরি। ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন। 

  • মাথাব্যথা ও মাথাঘোরা 

তীব্র গরমে মাথাব্যথা এবং মাথাঘোরা সাধারণ সমস্যা। এই অবস্থাগুলো সাধারণত শরীরে পানির অভাব, অতিরিক্ত সূর্যের তাপ, এবং ঘরের ভিতর ভেন্টিলেশন না থাকার কারণে ঘটে। মাথাব্যথার ফলে মনোযোগ কমে যায় এবং কাজের ক্ষমতা হ্রাস পায়। মাথাঘোরা শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি তৈরি করতে পারে, যা চলাফেরায় সমস্যা সৃষ্টি করে। 

  •  অতিরিক্ত ক্লান্তি 

 তীব্র গরমে অতিরিক্ত ক্লান্তি একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি। এই অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে, যার ফলে ডিহাইড্রেশন, মাথাব্যথা এবং ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ক্লান্তি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে, কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে বাধা দেয়। তাই, তীব্র গরমে সঠিক পরিমাণে পানি পান করা এবং বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

তীব্র গরমে সুস্থ থাকার উপায়ের মধ্যে প্রধান হলো পানি পান। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। এ ছাড়া ডাবের পানি, ফলমূল এবং সবজি, যেমন তরমুজ ও শসা পানির ভাল উৎস। কাজের মাঝে মাঝে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, যা আপনাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, সুস্থ থাকতে জল অত্যাবশ্যক।  

তীব্র গরমে শরীরকে সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাজা ফল ও সবজি যেমন তরমুজ, শসা এবং পেঁপে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে এবং হাইড্রেশন বাড়ায়। দই এবং লেমনেডের মতো প্রাকৃতিক পানীয়ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। সালাদ এবং হালকা খাবার গ্রহণ করলে অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকা যায়, যা শরীরকে ভারী ও অসুস্থ করে তোলে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেহের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। 

তীব্র গরমের দিনে শরীরকে আরামদায়ক রাখার জন্য হালকা পোশাক পরিধান করা অপরিহার্য। তুলা ও লিনেনের মতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সক্ষম কাপড় বেছে নিন, কারণ এগুলো ত্বক থেকে ঘাম শোষণ করে এবং শরীরকে শীতল রাখে। গাঢ় রঙের পরিবর্তে হালকা রঙের পোশাক পরা উত্তম, কারণ এগুলো সূর্যের তাপ প্রতিফলিত করে। নিয়মিত হালকা পোশাক পরিধান করলে গরমে স্বস্তি পাওয়া যায় এবং এ ধরনের পোশাক পরলে গরমে আপনার কার্যক্ষমতা বজায় থাকে।

গরমের তাপে বাইরে বের হলে ছাতা এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাতা আপনার শরীরকে সূর্যের বিকিরণ থেকে রক্ষা করে এবং সরাসরি রোদে যেতে দিতে পারে। পাশাপাশি, সানস্ক্রিন লাগানো ত্বকের ক্ষতি রোধ করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যকে বজায় রাখে। SPF 30 বা তার চেয়ে বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, এবং প্রতি দুই ঘণ্টায় আবার লাগান। গরমের সময় এই দুটি উপায় মেনে চললে তীব্র গরম থেকে অনেকটাই সুরক্ষা পাওয়া যাবে।

সাধারণত দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সূর্যের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ থাকে। তাই এই সময়ে বাইরে কাজ করার পরিবর্তে খুব ভোরে বা সন্ধ্যায় কাজ সেরে নেওয়া ভালো। এতে অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে বাঁচা যাবে। গরমের দিনে যতটা সম্ভব বাড়ির ভিতরে থাকার চেষ্টা করুন। এসি বা ফ্যান ব্যবহার করে বাড়ির ভিতর ঠাণ্ডা রাখা যেতে পারে। তবে এসি ব্যবহার করলে বেশি সময় ধরে না রেখে মাঝেমধ্যে ছেড়ে দিন, যাতে বাতাস চলাচল বজায় থাকে।

শরীরকে তীব্র গরম থেকে বাঁচাতে ভেজা তোয়ালে ব্যবহার করা একটি কার্যকরী উপায়। গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই তোয়ালেগুলি অত্যন্ত সহায়ক। একটি তোয়ালে পানিতে ভিজিয়ে নিন এবং তা মুখ, গলা বা হাতের ওপর রেখে দিন। এটি ত্বকের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে শীতল অনুভব করাবে। এছাড়াও, ভেজা তোয়ালে ব্যবহার করলে ঘামের সমস্যা কম হয় এবং আপনাকে আরামদায়ক রাখে। তাই, গরমে স্বস্তি পেতে আজই ভেজা তোয়ালে ব্যবহার করুন!

গরমের মৌসুমে সুস্থ ও সতেজ থাকার জন্য সবুজ শাকসবজি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই সবজি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরে জলীয় পদার্থের অভাব পূরণ করে। পেঁপে, শাক, পালং, ও ব্রোকলি খাবারে অন্তর্ভুক্ত করলে তা ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসের চাহিদা পূরণ করে। এছাড়া, এই সবজিগুলি হজম শক্তি বাড়ায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই, গরমের দিনে সবুজ শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

গরমের সময় আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে টক জাতীয় ফল খাওয়া খুবই উপকারী। লেবু, আমড়া, কাঁচা পেঁপে এবং কাঁচা আমের মতো ফলগুলো শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই ফলগুলোতে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া, টক ফল খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয় এবং এটি হজমে সাহায্য করে। তাই গরমের দিনে টক ফলের স্যালাড বা জুস গ্রহণ করলে সজীবতা বজায় রাখা সম্ভব।

গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।

গরমের দিনে স্বাভাবিক জীবনযাপন বজায় রাখতে কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করুন। প্রচুর পানি পান করুন, কারণ হাইড্রেশন গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে বের হওয়ার সময় হালকা ও শ্বাসরোধী কাপড় পরুন এবং টুপি বা ছাতা ব্যবহার করুন। এসি বা পাখা ব্যবহার করে ঘরকে শীতল রাখুন। তাজা ফল ও সবজি খান, যা শরীরকে শীতল রাখে। ব্যায়াম সকাল বা সন্ধ্যায় করুন, যখন তাপমাত্রা কম থাকে। এভাবে গরমে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন বজায় রাখা সম্ভব।

তীব্র গরম থেকে বাঁচতে এই উপায়গুলো মেনে চললে শরীর সুস্থ থাকবে এবং নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তীব্র গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা পোশাক পরা, সানস্ক্রিন ব্যবহার এবং ঘরে অবস্থান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাপমাত্রার পরিবর্তনে দ্রুত মানিয়ে নেওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই গরমে সতর্কতা অবলম্বন করাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

dr. shahidul islam
Dr. S.M Shahidul Islam

ডা. এস. এম শহীদুল ইসলাম একজন স্বনামধন্য আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ পেইন এন্ড প্যারালাইসিস ডাক্তার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঔষধ বিহীন চিকিৎসা আকুপাংচারের মাধ্যমে সফলতার সাথে চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন। তার চিকিৎসা ব্যথা নিরাময়ের জন্য ব্যপক সফলতা পেয়েছে। তিনি বাংলাদেশের একজন সেরা ব্যথার ডাক্তার (Best pain doctor in Bangladesh) হিসেবেও খ্যাত। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থিত SUO XI Hospital (Acupuncture) এ চীফ ভিজিটিং কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

Book a appointment for pain and paralysis doctor

Phone: 09613-100600

Address: SUO XI Hospital, 24/1 Shaan Tower, Chamelibag, Shantinagar, Lift 5, Dhaka 1217

Map Direction: Click here

Leave a Reply

Receive the latest news

Subscribe To My Weekly Newsletter

Get notified about new articles