বর্তমান পৃথিবীতে উচ্চ রক্ত চাপের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এর কারণ হলো ব্যস্ততম জীবন, তেল চর্বি জাতীয় খাবার ও অনিয়মিত জীবনযাপন। যার কারণে বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে স্ট্রোকের হার অতি মাত্রায় বেড়ে গিয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করলে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে।
আকুপাংচার চিকিৎসার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আকুপাংচার মূলত হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চিকিৎসা করার একটি পদ্ধতি। এই মাধ্যমে কোন প্রকার ওষুধ ছাড়া চিকিৎসা করা হয়। আকুপাংচার বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয়া একটি চিকিৎসা মাধ্যম, আকুপাংচারের মাধ্যমে ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছেন অনেকেই।
বাংলাদেশের সুনামধন্য আকুপাংচার চিকিৎসক ডা. এস. এম. শহিদুল ইসলাম আকুপাংচার চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ্য করেছেন অসংখ্য রোগীকে। তার দক্ষতার উপর নির্ভর করে দেশ এবং বিদেশে থেকে রোগীরা এসে বর্তমানে বাংলাদেশে আকুপাংচার চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উচ্চ রক্তচাপ কি? (High Blood Pressure/Hypertension)
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বা হাইপারটেনশন (High Blood Pressure, Essential Hypertension) একটি অতি পরিচিত রোগ। সময়মত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা না হলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মত মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও তারা সেই সম্পর্কে অবগত থাকেন না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রায় অর্ধেক রোগীই জানেন না যে তারা এ রোগে ভুগছেন। উচ্চ রক্তচাপ থাকা সত্ত্বেও, একজন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে ঝুঁকিমুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। এ ছাড়াও সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সহজেই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়।
উচ্চ রক্তচাপ বোঝার উপায়
সাধারণত হাই প্রেসার এর বিশেষ কোনো লক্ষণ থাকে না। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না তা বোঝার উপায় হলো নিয়মিত রক্তচাপ মাপা। রক্তচাপ মাপার ক্ষেত্রে রক্ত মাপার যন্ত্র দ্বারা দুইটি সংখ্যা রেকর্ড করা হয়
সিস্টোলিক প্রেসার বা চাপঃ দুটি রিডিং এর মধ্যে বড় সংখ্যা বা ওপরের মানটি হলো সিস্টোলিক চাপ। হৃৎপিণ্ড থেকে প্রতি স্পন্দনে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনের সময়ে এই চাপ সৃষ্টি হয়।
ডায়াস্টোলিক প্রেসার বা চাপঃ রিডিং দুটির মধ্যে ছোট সংখ্যা বা নিচের মানটি হলো ডায়াস্টোলিক চাপ। রক্ত সঞ্চালনের বিরুদ্ধে রক্তনালীর বাধা থেকে এই চাপের সৃষ্টি।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণসমূহ (Symptoms of High Blood Pressure)
অধিকাংশ লোকই বুঝতে পারে না তার উচ্চরক্তচাপ আছে, অর্থাৎ উচ্চরক্তচাপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গবিহীন। এ জন্যই উচ্চরক্তচাপকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার বা নীরব ঘাতক। যেটা আবশ্যক তা হলো নিয়মিত রক্তচাপ চেক করা। যে উপসর্গগুলো হতে পারে তা হলো
মাথা ধরা- বিশেষ করে ভোরে বা শেষ রাতে মাথা ধরা। এর সঙ্গে ঘেমে যাওয়া বিশেষ করে রাতের শেষের দিকে ঘামা। মাথাব্যথার সঙ্গে ঘাড়ে ব্যথা বা পিঠের উপরের দিকে ব্যথা বা জ্যাম লাগার অনুভূতি হতে পারে। এর সঙ্গে কান বন্ধ লাগতে পারে; দৃষ্টি শক্তির পরিবর্তন পরিলক্ষিত হতে পারে।
উচ্চরক্তচাপকে নাক দিয়ে রক্তক্ষরণের কারণ বলে সাধারণের ধারণা থাকলেও এটা ঠিক নয়। টেনশনে অনেকের প্রেশার কিছুটা বাড়লেও শুধু প্রেশারের চিকিৎসাতেই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না। প্রেশার অনেক বেশি হলে (বিশেষ করে বয়স্কদের) দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, মতিভ্রম, বমি লাগা, গা কাপা ইত্যাদি হতে পারে।
উচ্চরক্তচাপের জন্য রক্তনালি শক্ত হয়ে যায় ফলে রক্ত সাপ্লাই কমে যায়। সেজন্য এনজাইনা বা হার্টের ব্যথা, হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন, হার্টের দুর্বলতা/হার্ট ফেইলুরের উপসর্গ নিয়ে আসতে পারে। একই কারণে ব্রেইন বিকল/স্ট্রোক, কিডনি বিকল/রেনাল ফেইলুরের উপসর্গ পাওয়া যেতে পারে হাইপ্রেসারের রোগীদের।
উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার কিছু কারণ
উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার কেন হয় সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে। বর্তমান সময়ে যেকোন বয়সের মানুষের উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে। ‘বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮’-এর হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।
উচ্চ রক্তচাপের বেশ কিছু প্রধান কারন নিচে দেওয়া হল:
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
- ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া
- খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল না থাকা
- অতিরিক্ত পরিমাণে মদপান করা
- অতিরিক্ত চা-কফি, কোমল পানীয় ও অন্যান্য ক্যাফেইন-জাতীয় পানীয় খাওয়ার অভ্যাস থাকা
- পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা
- ধূমপান ও মদ্য পানের অভ্যাস
- রাতে একটানা ৬-৮ ঘণ্টার চেয়ে কম ঘুমানো
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
প্রথমত উচ্চ রক্তচাপ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। এছাড়াও বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিছু প্রাকৃতিক খাবার যেমন শাক-সবজি, ফল, ভেষজ ইত্যাদি খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমানো যায়। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ব্যায়াম খুব কার্যকরী একটা পদ্ধতি। বিশেষজ্ঞদের মতে ব্যায়াম করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায় গুলো নিচে দেওয়া হল:
- সকাল ও বিকালে মরিঙ্গা চা পান করুন
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কাচা রসুন একটি কার্যকরী উপাদান
- পেঁপে, পালংশাক, ফুলকপি, শসা, লাউ, মটরশুঁটি, কলমি শাক, বাঁধাকপি ইত্যাদি খাওয়া
- ফলমূল যেমন: নাশপতি, বেদানা, পেয়ারা, আমলকি, পেঁপে
- হাটাহাটি বা ব্যায়াম করা
এছড়াও এই ব্লগের নিচে বাংলাদেশের সেরা আকুপাংচার স্পেশালিষ্ট ডা. এস. এম. শহীদুল ইসলাম এর উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য কার্যকরী ৫ টি টিপস শেয়ার করা হয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বা হাইপারটেনশন রোগের চিকিৎসায় আকুপাংচার
আকুপাংচার হল একটি ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা অনুশীলন যা বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় এবং থেরাপিউটিক প্রভাবকে উদ্দীপিত করার জন্য শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলিতে পাতলা সূঁচ দিয়ে উদ্দীপনা তৈরি করা হয়। যদিও আকুপাংচার সাধারণত বিভিন্ন স্বাস্থ্য অবস্থার জন্য ব্যবহৃত হয়। উচ্চ রক্তচাপ জনিত রোগের ক্ষেত্রে আকুপাংচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই সূঁই অনেক পাতলা যা শরীরের গভীরে সামান্য চাপে প্রবেশ করে এবং শরীরকে উদ্দীপিত করে।
হাইপারটেনশনের চিকিৎসায় আকুপাংচারের কার্যকারিতার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা রয়েছে। আকুপাংচারের প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। জীবনধারা পরিবর্তন এবং খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তনের সাথে সাথে আকুপাংচার চিকিৎসা গ্রহণের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং নার্ভের জটিলতা দূর করে।
উচ্চ রক্তচাপের অন্যান্য প্রচলিত চিকিৎসা যেমন ওষুধ, খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন, ব্যায়াম এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের সাথে একত্রে আকুপাংচারকে একটি পরিপূরক থেরাপি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আকুপাংচার স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং স্ট্রেস কমাতে এবং শিথিলতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা পরোক্ষভাবে রক্তচাপকে প্রভাবিত করতে পারে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে আকুপাংচার কিছু নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোন নিঃসরণকে প্রভাবিত করতে পারে।
আকুপাংচার ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করার পাশাপাশি শরীরকে আরও দক্ষ করে তোলার একটি চমৎকার উপায়। আকুপাংচারের মাধ্যমে কোষগুলি বৈদ্যুতিক শক দিয়ে উদ্দীপিত হয়,ফলে উক্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। এই চিকিৎসাটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণ করে যা অবস্থার উন্নতি করতে পারে।
নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রণঃ আকুপাংচার বিবেচনা করার সময়, একজন যোগ্যতাসম্পন্ন এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত আকুপাংচার বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। নিশ্চিত করুন যে অনুশীলনকারী সঠিক স্বাস্থ্যবিধি এবং নিরাপত্তা মান অনুসরণ করে।
সংক্ষেপে, হাইপারটেনশন পরিচালনার জন্য আকুপাংচার একটি পরিপূরক পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এটি স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের দ্বারা সুপারিশকৃত প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা চিকিত্সা এবং জীবনধারা পরিবর্তনগুলিকে প্রতিস্থাপন করা উচিত নয়। আপনার উচ্চ রক্তচাপ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন করার আগে সর্বদা আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করুন। আপনার নির্দিষ্ট অবস্থার জন্য কোন চিকিৎসা এবং জীবনধারার পরিবর্তনগুলি সবচেয়ে উপযুক্ত সে সম্পর্কে তারা আপনাকে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে।
আকুপাংচার চিকিৎসার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কমানো যায়। আকুপাংচার একটি চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কোন প্রকার ঔষধ ছাড়া চিকিৎসা করা হয়ে। বাংলাদেশে শশী হাসপাতাল (আকুপাংচার) এ দেশসেরা আকুপাংচার চিকিৎসক ডা. এস. এম. শহীদুল ইসলামের তত্বাবধানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। তার চিকিৎসার সুনাম সারা বিশ্বে ছিড়িয়ে যাওয়ায়, দেশ ছাড়াও বিদেশ থেকে বিভিন্ন রোগী বর্তমানে বাংলাদেশে এসে শশী হাসপাতাল থেকে আকুপাংচার চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ্য হচ্ছেন। বিদেশী রোগীদের সুস্থ্যতার গল্প জানতে ইউটিউব চ্যানেলটি দেখুন।
See More…
বুকের দুধ কম তৈরি হওয়ার (Lactational deficiency) কারণ
যৌন সমস্যা হলে করণীয় | যৌন সমস্যার চিকিৎসা | যৌন সমস্যার ওষুধ | আকুপাংচার
Frequently Asked Questions (FAQ)
ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়?
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা নানা রকম ঔষধ খেয়ে থাকি। তবে ঔষধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমানো সম্ভব। কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে উচ্চ রক্তচাপ কমানো যায়, যেমনঃ মরিঙ্গা চা, লবণ নিয়ন্ত্রণ, কাচা রসুন, নিয়মিত ব্যায়াম, মানুষিক ও শারীরিক চাপ কমানো, ব্যায়াম করা, আদা খাওয়া, শাক সবজি ও ফলমূল খাওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও আকুপাংচার চিকিৎসার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কমানো যায়।
প্রেসার বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ কি?
বিভিন্ন কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। তবে উচ্চ রক্তচাপ হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো হল: ঘাড় ব্যথা করা, বমি বমি ভাব, রাতে ভালো ঘুম না হওয়া, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ?
নানান কারণে ব্লাড প্রেসার বেড়ে থাকে। এর মধ্যে প্রধান কিছু কারণ হল: দুশ্চিন্তা, স্থুলতা, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, ধূমপান, মদ্যপান, মানসিক চাপ, ঘুম না হওয়া ইত্যাদি। এসকল কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।