মেনিয়ারস রোগ (Meniere’s Disease) কি?
মেনিয়ারস রোগ (Meniere’s Disease) এমন একটি অবস্থা যাতে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয় অনুভব করেন, যা দৈনন্দিন জীবনযাপনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। মেনিয়ারস বা উন্মত্ত মানসিকতার পর্ব সাধারণত একসপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকে এবং এটি হাইপোমেনিয়ার একটি গুরুতর আকার। এটি একটি উপসর্গ যা সাধারণত বাইপোলার ডিসঅর্ডার, পোস্টপার্টাম সাইকোসিস এবং এরকম অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে দেখা যায়, যেখানে মেজাজ চরম পর্যায়ে থাকে। এই সমস্ত মানুষের মধ্যে মেনিয়ারস প্রায়শই বিষণ্নতায় পরিবর্তিত হয়।
এর সঙ্গে যুক্ত প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
উন্মত্ত মানসিক অবস্থার ঘটনাপর্ব চলাকালীন আপনি যে সমস্ত কাজকর্ম করবেন অথবা উপলব্ধি করবেন:
- অত্যন্ত খুশি, উদ্দীপনা ধরে রাখতে অক্ষম।
- অত্যধিক সক্রিয়।
- খুব দ্রুত কথা বলা বা চিন্তাভাবনা করা।
- ঘুমোতে অথবা খেতে অনিচ্ছুক।
- সহজেই বিভ্রান্ত হওয়া।
- সহজেই বিরক্ত হওয়া এবং রেগে যাওয়া।
- বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী মনে হওয়া।
- অন্তর্দৃষ্টির অভাব।
- অমূলক চিন্তাভাবনা এবং ধারণা পোষণ।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
মেনিয়ারস সম্ভাব্য কারণগুলি হল-
- বাইপোলার রোগ।
- মানসিক চাপ।
- জিনগত কারণ।
- ঋতুর পরিবর্তন।
- নির্দিষ্ট ওষুধ অথবা অ্যালকোহলের ব্যবহার।
- স্নায়ুর কার্যকারিতায় অস্বাভাবিকতা।
- নির্দিষ্ট কিছু রোগের অবস্থার অন্তিম পর্যায়ের প্রকাশ।
- প্রসবাবস্থা।
- প্রিয়জনকে হারানো, বিবাহবিচ্ছেদ, হিংসাত্মক, অবমাননাকর, বেকারত্ব, আর্থিক সমস্যার মতো ঘটনা।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
মেনিয়ারস রোগের চিকিৎসায় আপনার চিকিৎসক (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ) বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারেন। মেনিয়া সৃষ্টি করতে এমন সমস্ত অন্যান্য কারণের সম্ভাবনা দূর করার জন্য তিনি আপনার চিকিৎসাগত ও ব্যক্তিগত ইতিহাস জিজ্ঞাসা করবেন। ইতিহাস জেনে নিলে কোনও সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনা চিহ্নিত এবং আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের মূল্যায়ন করতে সহায়তা করবে। মেনিয়া বা ম্যানিয়ার ব্যবস্থাপনায় সাধারণত অ্যান্টি-সাইকোটিক ড্রাগ দেওয়া হয়। বাইপোলার রোগ সম্পর্কিত মেনিয়ার ক্ষেত্রে, মুড স্টেবিলাইজার দেওয়া হয়। ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয় (অথবা কিছু মুড স্টেবিলাইজার ওষুধ)। ওষুধের পাশাপাশি, সাইকোথেরাপি (যা ধরণ চিহ্নিত করতে সহায়তা করে, বর্তমানে ভালোভাবে বাঁচতে উৎসাহিত করে বা সমস্যার সমাধান করে) এবং পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে সমর্থন দুর্দান্তরকম সহায়ক হতে পারে।
মেনিয়ার রোগের চিকিৎসায় আকুপাংচারের ভুমিকাঃ
আকুপাংচার আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে প্রাচীন চীনে আবিষ্কৃত একটি ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা বর্তমানে সমস্ত পৃথিবীতে বহুল প্রচলিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা ১০০ টির ও বেশি রোগের জন্য আকুপাংচার চিকিৎসাকে সুপারিশ করা হয়েছে। আকুপাংচার যেকোনো ব্যথা সমস্যার সমাধান দেয়। যার চিকিৎসা দেওয়া হয় সূক্ষ্ম সুচের মাধ্যমে। আকুপাংচার দেওয়ার ফলে শরীর উদ্দীপ্ত হয়, ব্যথা উপশম করে, প্রদাহ কমায়, রক্ত চলাচলে বৃদ্ধি ঘটে, অবসন্নতা দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গবেষণা অনুসারে আকুপাংচার সূঁচ শরীরের বিভিন্ন অংশকে উদ্দীপিত করে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। এটি ব্যথা উপশমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আকুপাংচার শরীরের শক্তি প্রবাহ বা “কিউই” ভারসাম্য বজায় রাখে এবং সম্ভাব্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলা করে যা ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। আকুপাংচার ক্ষুধা এবং তৃপ্তির সাথে সম্পর্কিত হরমোন এবং নিউরোট্রান্সমিটারকে প্রভাবিত করে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
আকুপাংচার মেনিয়ার রোগ ও তাঁর চাপ কমাতে পারে। এছাড়া এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আকুপাংচার শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এক ধরণের উদ্দীপনা তৈরী করে। যার কারণে মেনিয়ার রোগের ব্যথাযুক্ত স্থান গুলির মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরী হয় এবং ব্যথা ধীরে ধীরে প্রশমিত হতে থাকে। সুতরাং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত আকুপাংচার মেনিয়ার রোগের বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। আকুপাংচার চিকিৎসার মূল ভিত্তি হলো শরীরের মাংসপেশি, ব্লাড ভেসেল, রক্তনালী, ইত্যাদি। আকুপাংচার পদ্ধতিতে রোগীর কশেরুকার যে লেভেলে সমস্যা আছে, আকুপাংচার পদ্ধতিটি সেই স্থানের আশেপাশে অবস্থিত চ্যানেলগুলোকে এর মাধ্যমে ইলেকট্রিক শক দিয়ে উদ্দীপিত করে। এতে সেই স্থানে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং বিভিন্ন রকম হরমোন নিঃসরণ হয়। এর ফলে উক্ত স্থানের ব্যথা উপশম হতে থাকে। এছাড়া মেনিয়ার রোগ সহ আরো বিভিন্ন ব্যথা ও নার্ভ জনিত সমস্যার ক্ষেত্রে আকুপা চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
See More…
খাঁটি সরিষার তেল (তেঁতুল কাঠের ঘানিতে ভাঙ্গানো) | Mustard Oil