আকুপাংচার এর আধুনিক চিকিৎসা

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা এক বড় চ্যালেঞ্জ। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির পাশাপাশি, প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোও নতুন করে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এমনই একটি পদ্ধতি হলো আকুপাংচার, যা হাজার হাজার বছর ধরে ব্যথা উপশম এবং রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আধুনিক জীবনযাত্রার চাপ এবং বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণে এই প্রাচীন চীনা চিকিৎসার প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এটি কেবল এক ঐতিহ্যবাহী প্রথা নয়, বরং আধুনিক বিজ্ঞানও এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করছে। এই ব্লগে আমরা যা যা জানব-

  • আকুপাংচার কী?
  • আকুপাংচারের ইতিহাস: প্রাচীন থেকে আধুনিক
  • আকুপাংচার কি WHO (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) দ্বারা স্বীকৃত?
  • আকুপাংচার কিভাবে কাজ করে?
  • আধুনিক আকুপাংচারের কৌশল
  • আকুপাংচার কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে কাজ করে?
  • আকুপাংচারের চিকিৎসা কত দিন ও কত সেশন লাগে?
  • আধুনিক আকুপাংচার চিকিৎসার সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা
  • আকুপাংচারের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা
  • বাংলাদেশে আধুনিক আকুপাংচারের প্রচলন
  • শশী হাসপাতাল থেকে আকুপাংচার চিকিৎসা নিয়ে পেশেন্টদের প্রতিক্রিয়া ও বাস্তব অভিজ্ঞতা

এসব বিষয় নিয়ে এই ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্য হলো আকুপাংচারের একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া এবং এর আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জানানো, যাতে পাঠকরা একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আকুপাংচার কী?

আকুপাংচার চীনের একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু বিন্দুতে খুবই সূক্ষ্ম সূঁচ প্রবেশ করিয়ে বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। এর মূল ভিত্তি হলো, মানবদেহে Qi নামক এক ধরনের জীবনীশক্তি প্রবাহিত হয়, যা শরীরের মেরিডিয়ান (Meridians) নামক শক্তিপথ দিয়ে চলাচল করে। যখন এই Qi প্রবাহে কোনো বাধা আসে বা ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখনই বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। আকুপাংচার এই বাধা দূর করে এবং Qi -এর ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে শরীরকে সুস্থ করে তোলে।

প্রাচীনকাল থেকেই এই আকুপাংচার চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তবে আধুনিক বিজ্ঞান এখন এর পেছনে থাকা কার্যকারণ বোঝার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, আকুপাংচার স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, এন্ডোরফিন নিঃসরণ বাড়ায় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথা নিরাময় প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে। এভাবে আকুপাংচারের মাধ্যমে ব্যথা কমানো, প্রদাহ কমানো এবং শরীরের সার্বিক সুস্থতা ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।

আকুপাংচারের ইতিহাস: প্রাচীন থেকে আধুনিক

আকুপাংচার (Acupuncture) একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হলেও বর্তমান সময়ে এসে এটি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে অনেক বেশি কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত। এই চিকিৎসাটি আজ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত এবং বিভিন্ন উন্নত দেশে আকুপাংচার চিকিৎসা ক্রমাগত চলছে অথচ এর সূচনা হয়েছিল হাজার হাজার বছর আগে একেবারে ভিন্ন রূপে। এর ইতিহাস কেবল একটি চিকিৎসা কৌশলের বিবর্তন নয় বরং মানব সভ্যতার স্বাস্থ্য এবং জ্ঞানচর্চার এক দীর্ঘ পথের গল্প। এটি সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন কৌশল এবং ধারণার সাথে বিকশিত হয়েছে।

আকুপাংচার চিকিৎসার উৎপত্তি (প্রাচীন যুগ):

আকুপাংচারের উৎপত্তি হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ বছর আগে প্রাচীন চীনে। তখনকার চিকিৎসাবিদরা বিশ্বাস করতেন যে মানুষের শরীরে এক ধরনের শক্তি প্রবাহিত হয়, যাকে বলা হয় Qi। এই Qi শরীরের মেরিডিয়ান (meridian) নামক নির্দিষ্ট পথ দিয়ে চলাচল করে। যদি কোথাও এই শক্তি প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয় তখন শরীরের বিভিন্ন অসুস্থতা দেখা দেয়। এই অসামঞ্জস্য ঠিক করার জন্য সূক্ষ্ম সূঁচের মাধ্যমে নির্দিষ্ট আকু-পয়েন্টে প্রবেশ করিয়ে সেই শক্তির সঠিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হতো – এটিই ছিল প্রাচীন আকুপাংচারের মূল দর্শন। “হুয়াংদি নেইজিং” (Huangdi Neijing) উল্লেখযোগ্য প্রাচীন গ্রন্থ – যাকে আকুপাংচারের মূল টেক্সট বই বলা হয়। এটি খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতকের দিকে রচিত হয়েছিল এবং এখানে ৩৬৫টি আকু – পয়েন্টের কথা উল্লেখ রয়েছে।

আধুনিক যুগ:

  • ১৯০০ শতাব্দী: আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসারের কারণে এই সময় চীনে ঐতিহ্যবাহী আকুপাংচার চিকিৎসার গুরুত্ব কিছুটা কমে যায়। তবে এটি জাপান, কোরিয়া এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতে বেশ প্রচলিত ছিল।
  • ১৯৭০-এর দশক: এই সময় আকুপাংচার চিকিৎসা ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। কারণ ১৯৭১ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন যখন চীন সফরে যান। তখন তার সফরসঙ্গী নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক জেমস রেস্টন চীনে অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশনের পর আকুপাংচারের মাধ্যমে তার ব্যথা উপশমের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন লেখেন। ফলে আকুপাংচার চিকিৎসা পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে।
  • বৈজ্ঞানিক গবেষণা: নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক জেমস রেস্টন প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে আকুপাংচারের কার্যকারিতা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু হয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন যে কীভাবে আকুপাংচার ব্যথা উপশম করে। গবেষণা করার ফলে বেশ কিছু ব্যাখ্যা উঠে আসে:
  • এন্ডোরফিন নিঃসরণ: আকুপাংচার মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামক প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হরমোন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে।
    • নার্ভের উপর প্রভাব: এটি স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে ব্যথার সংকেত পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
    • রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি: নির্দিষ্ট পয়েন্টে আকুপাংচার করার ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা নিরাময় প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বর্তমানে আকুপাংচার চিকিৎসার অবস্থা:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি বর্তমানে বাংলাদেশেও আকুপাংচারের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। আকুপাংচারের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization – WHO) একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১০০টির ও বেশি রোগ ও তার অবস্থার জন্য আকুপাংচার চিকিৎসার সুপারিশ করেছে। আকুপাংচারকে এখন বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এটি শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার অংশ হিসেবেই নয় বরং আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার একটি সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার অংশ হিসেবেও এটি স্থান করে নিচ্ছে।

আকুপাংচার কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দ্বারা স্বীকৃত?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) আকুপাংচারকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করে। ১৯৭৯ সালে আয়োজিত এক সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৪৩টি রোগের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল যেখানে আকুপাংচার চিকিৎসা উপকারী হতে পারে বলে প্রকাশ করা হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে গবেষণার অগ্রগতির কারণে এই তালিকাটি আরও বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রায় ১০০টিরও বেশি রোগ ও অবস্থার জন্য আকুপাংচারকে সমর্থন করে

আরও জানুন- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দ্বারা ১০০টিরও বেশি রোগ ও অবস্থা

আকুপাংচার কিভাবে কাজ করে?

আকুপাংচার হলো চীনের প্রাচীন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু আকু-পয়েন্টে খুবই সূক্ষ্ম সূঁচ ঢুকিয়ে বিভিন্ন রোগ ও ব্যথা নিরাময় করা হয়। আকুপাংচারের কার্যকারিতা নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞান পুরোপুরি নিশ্চিত করতে না পারলেও কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় যে আকুপাংচার কীভাবে কাজ করে।

আকুপাংচার এটি মূলত- শরীরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে কাজ করে। ফলে মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড এবং পেশি থেকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। এই রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হওয়ার ফলে শরীরের নিজস্ব নিরাময় প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে, যার ফলে ব্যথা কমে যায় এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ফিরে আনতে সাহায্য করে।

আধুনিক গবেষণা আকুপাংচারের কার্যকারিতা নিয়ে কিছু বৈজ্ঞানিক ভিত্তি উপস্থাপন করেছে। তা নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরা হলো:

এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিন নিঃসরণ:

আকুপাংচার করার ফলে শরীরে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হরমোন এন্ডোরফিন এবং সেরোটোনিন নিঃসরণ করে। এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিন ব্যথার সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধা দেয়, মন শান্ত করে, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমায় এবং প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা কমে।

নার্ভ স্টিমুলেশন ও স্নায়ুতন্ত্রের প্রতিক্রিয়া:

আকুপাংচারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যপ্রণালী হলো নার্ভ স্টিমুলেশন বা স্নায়ুর উদ্দীপনা। আকুপাংচার করার সময় শরীরের নির্দিষ্ট বিন্দুতে যে সূঁচগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো সরাসরি ওই স্থানের স্নায়ুগুলোকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে যা ঘটে:

  • ব্যথার সংকেত ব্লক করে
  • স্থানীয় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে
  • নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ করে

রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি ও টিস্যু হিলিং:

আকুপাংচার করার ফলে টিস্যু এবং পেশিগুলোর মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এক ধরনের প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে। এর ফলে এটি ব্যথা, পেশি সংক্রান্ত সমস্যা এবং প্রদাহের চিকিৎসায় বেশ কার্যকর বলে মনে করা হয়।

অটোনোমিক নার্ভ সিস্টেমে ভারসাম্য আনয়ন:

আকুপাংচারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতা হলো অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেমে ভারসাম্য ফিরিয়ে নিয়ে আসা। এটি স্নায়ুতন্ত্রের স্বয়ংক্রিয় কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, যেমন – হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাস, হজম শক্তি এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেমের দুটি প্রধান অংশ রয়েছে তা নিম্নরুপ:

১. সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম: এটি আমাদের বিভিন্ন কঠিন সময়ে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি বা বিপদের সম্মুখীন হই, তখন এটি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

২. প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম: এটি বিশ্রাম ও হজম প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া শরীরের মন শান্ত করে, হৃদস্পন্দন কমায় এবং হজমে সাহায্য করে।

আধুনিক আকুপাংচারের কৌশল

আধুনিক আকুপাংচার শুধু হাতে সুঁই ফোটাতে সীমাবদ্ধ নয় বরং এতে বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তি এবং কৌশলের ব্যবহার করা হয়। আকুপাংচারের সাথে যেমন কৌশল ব্যবহার করা হয় তা নিম্নে কিছু কৌশল তুলে ধরা হলো:

১. ইলেক্ট্রো-আকুপাংচার (Electro-acupuncture): এই পদ্ধতিতে সুঁইয়ের সাথে মৃদু বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহিত করা হয়। এটির জন্য একটি ইলেকট্রোড ব্যবহার করা হয় যা সূঁচের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

কিভাবে কাজ করে?

  • বৈদ্যুতিক উদ্দীপনার মাধ্যমে নার্ভ বা স্নায়ু উদ্দীপিত হয়
  • এন্ডোর্ফিন নিঃসরণ বাড়ে, ফলে ব্যথা কমে
  • পেশীর টান কমায় ও রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়

কোথায় বেশি ব্যবহৃত হয়?

পেশি ব্যথা, গেঁটেবাত, স্নায়ুজনিত সমস্যা এবং স্ট্রোক পরবর্তী জটিলতা ইত্যাদি

২. লেজার আকুপাংচার (Laser Acupuncture):

এই পদ্ধতিতে সূঁচের পরিবর্তে লো-লেভেল লেজার লাইট ব্যবহার করে নির্দিষ্ট আকু-পয়েন্টে উদ্দীপনা দেওয়া হয়।

৩. মোক্সিবাস্টন (Moxibustion)

এই পদ্ধতিতে আকুপাংচারের নির্দিষ্ট পয়েন্টে সূঁচ প্রয়োগের পাশাপাশি মক্সা নামে এক ধরনের ভেষজ উপাদান জ্বালিয়ে উষ্ণতা প্রয়োগ করা হয়।

  • ঠান্ডাজনিত রোগে কার্যকর
  • রক্ত প্রবাহ উন্নত করে
  • শরীরের Qi বা শক্তি প্রবাহ উত্তেজিত করে

৪. কান আকুপাংচার (Auricular Acupuncture)

এই কৌশলে কানের নির্দিষ্ট আকু-পয়েন্টে সূঁচ ঢুকানো হয়, কারণ কানে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সাথে সংযুক্ত পয়েন্ট রয়েছে।

উপকারিতা:

  • মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক

৫. স্ক্যাল্প আকুপাংচার (Scalp Acupuncture)

মাথার খুলির উপরের নির্দিষ্ট অংশে সূঁচ ফুটিয়ে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ সক্রিয় করা হয়।

উপকারিতা:

  • স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসনে সহায়ক
  • পক্ষাঘাত ও নার্ভ ডিজঅর্ডারে কার্যকর
  • মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়

আকুপাংচার কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে কাজ করে?

আকুপাংচার চিকিৎসা

আকুপাংচার বিভিন্ন ধরনের রোগের চিকিৎসায় একটি বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে ব্যথা নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে সব রোগের ক্ষেত্রে আকুপাংচার কার্যকর নয়, কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট রোগ ও অবস্থার ক্ষেত্রে এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। আকুপাংচার যে সকল রোগের ক্ষেত্রে কার্যকর, তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

১. ব্যথা সম্পর্কিত রোগ:

আকুপাংচার মূলত বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র ব্যথা নিরাময়ের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

  • ঘাড়ে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, কনুই ব্যথা, কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথা ও পায়ে ব্যথার চিকিৎসায় আকুপাংচার একটি প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি।
  • আর্থ্রাইটিস: অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা গাঁটের ব্যথার জন্য আকুপাংচার বেশ কার্যকরী।
  • মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন: টেনশন জনিত মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের তীব্রতা কমাতে আকুপাংচার কার্যকর হতে পারে।
  • অন্যান্য ব্যথা: দাঁতের ব্যথা, মাসিকের সময় পেটে ব্যথা, কার্পাল টানেল সিনড্রোম এবং স্পোর্টস ইনজুরির মতো সমস্যাতেও এটি ব্যবহার করা হয়।

২. মানসিক ও স্নায়ু সম্পর্কিত রোগ:

  • উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা: আকুপাংচার মানসিক চাপ কমাতে, মনকে শান্ত করতে এবং উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো উপশম করতে সাহায্য করে।
  • অনিদ্রা: ঘুমের সমস্যা বা অনিদ্রা দূর করতে আকুপাংচার বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে কার্যকর।
  • স্ট্রোক পুনর্বাসন: স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসনের সময় পক্ষাঘাতগ্রস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে আকুপাংচার ব্যবহৃত হয়।

৩. হরমোন সম্পর্কিত রোগ:

আকুপাংচার বন্ধ্যাত্ব, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম ও ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা পুরুষের অক্ষমতা চিকিৎসায় আকুপাংচার একটি সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে কার্যকর।

৪. হজম ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা:

  • ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS): হজমের এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণে আকুপাংচার সাহায্য করে।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা: অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা হাঁপানির মতো উপশমেও কার্যকর।

আকুপাংচারের চিকিৎসা কত দিন ও কত সেশন লাগে?

আকুপাংচার চিকিৎসার সময়কাল এবং সেশনের সংখ্যা রোগের ধরণ, রোগের স্থায়িত্বকাল, রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। তাই এটির নির্দিষ্ট কোনো সময় বা সেশন বলা যায় না। একজন আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ সম্ভাব্য সময়কাল বলে দিতে পারে।

সেশন কিভাবে হয়?

  • প্রতি সেশন গড়ে ২০-৩০ মিনিট স্থায়ী হয়
  • সাধারণত প্রতিদিন দেওয়া যায়
  • কিছু ক্ষেত্রে সপ্তাহে ২-৩ দিন সেশন দেওয়া হয়

একজন অভিজ্ঞ আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ রোগীর সামগ্রিক অবস্থা মূল্যায়ন করে একটি উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং আকুপাংচার সেশনের সংখ্যা ও ফ্রিকোয়েন্সি সম্পর্কে সম্ভাব্য ধারণা দিতে পারেন।

আধুনিক আকুপাংচার চিকিৎসার সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা

আকুপাংচার আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে এর প্রয়োগ ও গবেষণা অনেক উন্নত হয়েছে। তাই, আধুনিক আকুপাংচারের কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

আধুনিক আকুপাংচার চিকিৎসার সুবিধা:

১. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম:

যেহেতু আকুপাংচার একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি, তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। একজন প্রশিক্ষিত আকুপাংচারিস্টের মাধ্যমে সঠিকভাবে এবং জীবাণুমুক্ত সূঁচ ব্যবহার করে আকুপাংচার চিকিৎসা করা হলে এটি খুবই নিরাপদ এবং কার্যকরী।

২. ব্যথা নিরাময়ে কার্যকারিতা:

আকুপাংচার দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি কোমর ব্যথা, পিঠের ব্যথা, ঘাড়ের ব্যথা, মাইগ্রেন, মাথাব্যথা এবং আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বিভিন্ন ধরনের ব্যথাজনিত রোগের চিকিৎসায় আকুপাংচারকে একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

৩. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি:

আকুপাংচার মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং অনিদ্রার মতো মানসিক সমস্যার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

৪. হরমোনের ভারসাম্য:

মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব, মেনোপজ বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের মতো হরমোন-সম্পর্কিত রোগ নিরাময়ে আকুপাংচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫. হজমশক্তি উন্নত করে:

আকুপাংচার পরিপাকতন্ত্রের আকু-পয়েন্ট উদ্দীপিত করে, যা গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৭. ওষুধের ওপর নির্ভরতা কমায়:

বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে যে রোগগুলো নিরাময়ে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। কিন্তু আকুপাংচার চিকিৎসায় কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয় না এবং প্রাকৃতিকভাবে উপশম দেয়।

৮. সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও নিরাপদ:

আকুপাংচার চিকিৎসায় কোনো ধরনের রাসায়নিক ওষুধ, অপারেশন লাগে না এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই এটি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ তবে আকুপাংচারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে আকুপাংচার করাতে হবে।

আধুনিক আকুপাংচারের সীমাবদ্ধতা:

১. রোগ নিরাময়ে সীমিত:

এটি অনেক গুরুতর বা জটিল রোগ, যেমন- ক্যান্সার বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের সরাসরি চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে প্রচলিত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

২. ব্যক্তিভেদে কার্যকারিতা:

আকুপাংচারের ফলাফল সবার ক্ষেত্রে একরকম হয় না।

৩. চিকিৎসার ব্যয় ও সময়:

আকুপাংচার চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং একটি কোর্স শেষ করতে অনেকগুলো সেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

৪. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

আকুপাংচারে বিশেষজ্ঞ এমন চিকিৎসকের হাতে এটি করলে হয়তো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই সবসময় উচিত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে আকুপাংচার করানো।

 

আকুপাংচারের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা

আকুপাংচার সাধারণত নিরাপদ হলেও কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সতর্কতা রয়েছে:

  • সামান্য ব্যথা বা অস্বস্তি: সুঁই প্রবেশ করানোর সময় হালকা চিমটি কাটার মতো অনুভূতি হতে পারে।
  • রক্তপাত: খুব সামান্য রক্তপাত হতে পারে, তবে এটি দ্রুত সেরে যায়।
  • সংক্রমণ: এটি খুবই বিরল। একবার ব্যবহারযোগ্য জীবাণুমুক্ত সুঁই ব্যবহার করলে সংক্রমণের ঝুঁকি খুবই কম থাকে।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:

  • গর্ভাবস্থা: গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট আকু-পয়েন্ট রয়েছে, যা এড়িয়ে চলা উচিত। তাই গর্ভবতী হলে অবশ্যই আকুপাংচার বিশেষজ্ঞকে জানাতে হবে।
  • একজন প্রশিক্ষিত এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত আকুপাংচার চিকিৎসকের কাছ থেকে আকুপাংচার চিকিৎসা নেওয়া।
  • চামড়ার সংক্রমণ বা কোনো ক্ষত হলে আকুপাংচার নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।
  • একবার ব্যবহারযোগ্য জীবাণুমুক্ত ব্যবহার নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রভৃতি।

বাংলাদেশে আধুনিক আকুপাংচারের প্রচলন

উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশে আকুপাংচারের প্রচলন ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং এটি ওষুধের বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। যদিও ঐতিহ্যবাহী চীনা আকুপাংচার অনেক পুরোনো কিন্তু বাংলাদেশে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত আকুপাংচারের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে নতুন। কারণ আকুপাংচার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব ছিল এবং এটিকে অনেকে অপ্রচলিত চিকিৎসা হিসেবে মনে করতেন। এছাড়া প্রশিক্ষিত আকুপাংচার বিশেষজ্ঞের অভাব ছিল।

আধুনিক আকুপাংচারের অগ্রযাত্রা:

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে আকুপাংচার চিকিৎসার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এই অগ্রগতির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:

  • বিশেষায়িত হাসপাতালের উত্থান: বর্তমানে কিছু বিশেষায়িত আকুপাংচার হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। তারমধ্যে শশী হাসপাতাল (আকুপাংচার) অন্যতম এবং এটি বাংলাদেশে আকুপাংচার চিকিৎসার প্রসারে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। শশী হাসপাতাল (আকুপাংচার) আকুপাংচার চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি ও বিভিন্ন অত্যাধুনিক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যার ফলে রোগী দ্রুত সময়ের মধ্যে সুস্থতা পাচ্ছে।
  • বাংলাদেশে আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ: ডা. এস, এম, শহীদুল ইসলাম পিএইচ.ডি. বাংলাদেশের আধুনিক আকুপাংচার চিকিৎসা পদ্ধতির একজন প্রখ্যাত ও অগ্রগামী বিশেষজ্ঞ। তিনি চীনের উহান টংজি থেকে আকুপাংচার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং ব্যথা ও প্যারালাইসিস এর ওপর পিএইচ.ডি. সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি শশী হাসপাতালের প্রধান কনসালটেন্ট হিসেবে রোগী দেখছেন। এই হাসপাতালটি আকুপাংচার এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য সুপরিচিত।
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধি: বিভিন্ন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞদের লেখা বইয়ের মাধ্যমে মানুষ আকুপাংচারের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে পারছে। বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, প্যারালাইসিস এবং বিভিন্ন বাত-ব্যথার চিকিৎসায় এর সুফল দেখে অনেকেই এই পদ্ধতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ডা. এস, এম, শহীদুল ইসলাম পিএইচ.ডি. এর আকুপাংচারের ওপর ৬টি বই পাবলিশ হয়েছে, বইগুলো নিম্নরুপ:

১. বাংলাদেশে আকুপাংচার চিকিৎসা ও নিরাময়

২. মাইগ্রেন ও আকুপাংচার

৩. স্ট্রোক থেকে পুনরুদ্ধারে আকুপাংচার

৪. পিএলআইডি ও আকুপাংচার প্রাকৃতিক উপায়ে নিরাময়

৫. পেটের সুস্থতায় আকুপাংচার

৬. পেটের যত সমস্যা ও আকুপাংচার সমাধান

  • ঔষধবিহীন চিকিৎসার চাহিদা: যারা সচেতন দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা ব্যথার জন্য বারবার ঔষধ সেবন করতে চান না বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে চান, তাদের কাছে আকুপাংচার একটি আকর্ষণীয় বিকল্প চিকিৎসা হয়ে উঠেছে।

শশী হাসপাতাল থেকে আকুপাংচার চিকিৎসা নিয়ে পেশেন্টদের রিভিউ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা:

শশী হাসপাতাল বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবায় আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন স্বনামধন্য একটি আকুপাংচার হাসপাতাল (Acupuncture Hospital)। এটি ২০১৯ সালে ওষুধের বিকল্প হিসেবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যাত্রা শুরু করে। শশী হাসপাতাল আকুপাংচার এবং ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগীদের জন্য বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ ঔষধ ও অপারেশন বিহীন একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। এখানে আকুপাংচার চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি, চেষ্ট থেরাপি, আকুপ্রেসার, ওজোন থেরাপিসহ প্রভৃতি অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। যার ফলে রোগীরা বিভিন্ন জটিল জটিল রোগ থেকে ওষুধ ছাড়া প্রাকৃতিক চিকিৎসায় দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।

শশী হাসপাতাল থেকে আকুপাংচার ও অন্যান্য সমন্বিত নিয়ে সুস্থ হয়েছেন এমন ২ জন রোগীর সুস্থতার রিভিউ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা নিচে আলোচনা করা হলো:

১. কুয়েত প্রবাসী মোঃ হাবিবুর রহমান সাহেব ব্যথার কারণে বিগত ২ মাস ধরে বিছানা থেকে উঠতে পারতেন না। পিএলআইডি (PLID) সমস্যার কারণে তীব্র ব্যথা কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তো। এসব সমস্যার কারণে তিনি লাঠিতে ভর দিয়ে হেঁটে শশী হাসপাতালে এসেছিলেন। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সার্বক্ষণিক ইনডোর কেয়ারে অত্যাধুনিক আকুপাংচার, ফিজিওথেরাপি ও অন্যান্য অত্যাধুনিক কম্বিনেশনের মাধ্যমে ৩০ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ।

২. ভিডিওতে রোগী ১০-১৫ বছর ধরে কোন খাবার খেতে পারতেন না। খাবার খেলে পেট ফোলাভাব হয়ে থাকতো এবং সবসময় ২ বেলা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে হতো। এই সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখানোর পরও সুস্থ না হয়ে ভারতের চেন্নাই গিয়েছিলেন চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। সেখানে আইবিএস (IBS)-এর সমস্যা ধরা পড়ে এবং সেখানকার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার পর সুস্থ হন নি। পরে শশী হাসপাতালের ভিডিও দেখে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে চলে আসেন। এখান থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন ওনার আইবিএস, ঘুমের সমস্যা, এলার্জি সমস্যা ও মাথা ব্যথা কমে গেছে এবং এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ।

দেশীয় রোগীর পাশাপাশি প্রবাসী ও বিদেশী নাগরিকদের কাছেও চিকিৎসার জন্য শশী হাসপাতাল হয়ে উঠছে একটি নির্ভরযোগ্য স্থান। অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, অভিজ্ঞ চিকিৎসক এবং সেবার উন্নত মানের কারণে শশী হাসপাতাল দ্রুত দেশ-বিদেশের রোগীদের আকর্ষণ করছে। নিচে শশী হাসপাতালে বিদেশী নাগরিক চিকিৎসা নিতে আসছে এমন রোগীর ভিডিও লিংক দেওয়া হলো:

পরিশেষে বলা যায়, আকুপাংচার চিকিৎসা একটি প্রাচীন চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি হলেও বর্তমানে এটি আধুনিক বিজ্ঞানের সহায়তায় আরও উন্নত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি কেবল রোগের লক্ষণ কমানোর জন্য নয় বরং শরীরের সামগ্রিক ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে সুস্থ জীবনযাপন করতে সাহায্য করে।

এটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, মাইগ্রেন, মানসিক চাপ, হজমজনিত সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় আকুপাংচার কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) এই পদ্ধতির কার্যকারিতা স্বীকার করেছে।

অন্যান্য চিকিৎসার মতোই আকুপাংচারের ক্ষেত্রেও সঠিক জ্ঞান, দক্ষতা বা আকুপাংচারে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। উন্তত বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও এর প্রচলন ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবে বলে আশা করা যায়।

আকুপাংচার চিকিৎসার মূল সুবিধা হলো এটি ঔষধবিহীন এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম। তাই যারা ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে চান, তাদের জন্য আকুপাংচার হতে পারে একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি।

সাধারণ জিজ্ঞাসা:

আকুপাংচার সেশন কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

আকুপাংচার সেশন সাধারণত ২০ থেকে ৩০ মিনিট স্থায়ী হয়। তবে রোগীর অবস্থা এবং রোগের ধরন অনুযায়ী এর সময়কাল কম বেশি হতে পারে।

সূঁচগুলি কি পুনরায় ব্যবহার করা হয়?

না, আধুনিক আকুপাংচার ক্লিনিকে সবসময় একবার ব্যবহারযোগ্য (Single-use) জীবাণুমুক্ত সূঁচ ব্যবহার করা হয়। এর ফলে সংক্রমণের কোনো ঝুঁকি থাকে না।

আকুপাংচার চিকিৎসার খরচ কেমন?

আকুপাংচার চিকিৎসার খরচ নির্ভর করে রোগের ধরন, সেশনের সংখ্যা এবং চিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর। প্রতিটি সেশনের জন্য আলাদা খরচ থাকে, যা রোগীর অবস্থার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।

আকুপাংচার চিকিৎসার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

আকুপাংচার একটি নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। কিছু ক্ষেত্রে সূঁচ প্রবেশ করানোর স্থানে খুবই সামান্য ব্যথা বা রক্তপাত পারে, যা খুব দ্রুত সেরে যায়। তবে একজন আকুপাংচার বিষয়ে প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে চিকিৎসা করানো জরুরি।

আকুপাংচার চিকিৎসা কি সবার জন্য নিরাপদ?

আকুপাংচার সাধারণত বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ। তবে যারা রক্ত পাতলা হয় এমন ওষুধ খান, যাদের পেসমেকার বসানো আছে এবং গর্ভবতী মহিলাদের কিছু নির্দিষ্ট পয়েন্ট রয়েছে সে পয়েন্টগুলোতে আকুপাংচার না করাই ভালো। তাই যেকোনো চিকিৎসা শুরু করার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

ঢাকায় আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ কোথায় পাওয়া যায়?

ডা. এস, এম, শহীদুল ইসলাম পিএইচ.ডি. এর মতো কিছু অভিজ্ঞ আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ঢাকায় রয়েছেন। তিনি চীনের উহান টংজি থেকে আকুপাংচার বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং ব্যথা ও প্যারালাইসিস এর ওপর পিএইচ.ডি. সম্পন্ন করেন। বর্তমানে ডা. এস, এম, শহীদুল ইসলাম পিএইচ.ডি. শশী হাসপাতালের প্রধান কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

ঢাকার বাইরে কি আকুপাংচার চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব?

হ্যাঁ, ঢাকার বাইরেও কিছু জায়গায় আকুপাংচার সেবা পাওয়া যেতে পারে, তবে ঢাকার শশী হাসপাতাল (আকুপাংচার) অন্যতম। কারণ এখানে আকুপাংচার চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি, ওজোন থেরাপিসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়

বাংলাদেশে কোথায় আকুপাংচার চিকিৎসা দেওয়া হয়?

বাংলাদেশে আকুপাংচার চিকিৎসা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। বর্তমানে শান্তিনগর চৌরাস্তাতে অবস্থিত শশী হাসপাতালে আকুপাংচার চিকিৎসা দেওয়া হয়। এটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের আকুপাংচার চিকিৎসার জন্য দেশে-বিদেশে বিশেষভাবে পরিচিত।