প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS) বা প্রাক মাসিক বলতে মেয়েদের মাসিকের আগে যে মানসিক বা শারীরিক উপসর্গগুলি দেখা দেয় তাকে বোঝায়। এ উপসর্গগুলো মাসিকের ৫-১২ দিন আগে শরীরে দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন কারণে PMS হতে পারে। এর প্রভাব কমাতে রয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থ্যা।
আকুপাংচার চিকিৎসার মাধ্যমে প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS) বা প্রাক মাসিক ভালো হয়। PMS প্রায় প্রতিটি মেয়ের ক্ষেত্রে হতে পারে। কিন্তু এর প্রভাব অনেক সময় বেড়ে যেতে পারে। আকুপাংচার এই রোগের সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আকুপাংচার এমন একটি চিকিৎসা যেখানে কোন প্রকার ঔষধের ব্যবহার করা হয়ে থাকে না, তাই কোন সাইড এফেক্ট নেই।
সারা বিশ্বে এই চিকিৎসার ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। বাংলাদেশের সুনামধন্য আকুপাংচার ডাক্তার ডা. এস. এম. শহীদুল ইসলাম এর তত্বাবধানে শশী হাসপাতালে আকুপাংচার চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা প্রাক মাসিক
প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS) বা প্রাক মাসিক বলতে মেয়েদের মাসিকের আগে যে মানসিক উপসর্গগুলি দেখা দেয় তাকে বোঝায়। মাসিকের সময় এই সমস্যা প্রায় প্রত্যেক মেয়েদের ক্ষেত্রেই হয়। প্রাক মাসিকের লক্ষণগুলি, যা প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS) নামে পরিচিত, মেয়েদের এবং মহিলাদের মাসিক শুরুর দিন বা সপ্তাহগুলিতে প্রভাবিত করতে পারে। PMS এর তীব্রতা পরিবর্তিত হতে পারে এবং এতে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ থাকতে পারে। এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত মেয়ে এবং মহিলারা PMS অনুভব করেন না এবং যারা করেন তাদের বিভিন্ন উপসর্গ থাকতে পারে।
প্রাক মাসিকের বা প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS) এর কারণ
প্রাক মাসিকের বা প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম (PMS) এর কারণ নির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় না। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হতে পারে। তবে এর কিছু বিশেষ কারণ থাকতে পারে সেগুলো হল:
- হরমোনের পরিবর্তন
- মস্তিষ্কের রাসায়নিক
- জিনগত প্রবণতা
- জীবনধারার কারণ
- ব্যায়ামের অভাব
প্রাক মাসিকের লক্ষণ (Premenstrual Syndrome)
মেজাজের পরিবর্তন: অনেক মেয়ে এবং মহিলা মেজাজ পরিবর্তন অনুভব করে, যেমন খিটখিটে, উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং মেজাজের পরিবর্তন। এই মানসিক উপসর্গ তীব্রতা পরিবর্তিত হতে পারে।
শারীরিক লক্ষণ: শারীরিক লক্ষণগুলির মধ্যে স্তন কোমলতা, ফোলাভাব, মাথাব্যথা এবং পেশী ব্যথা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। পেট ফাঁপাও সাধারণ এবং হালকা অস্বস্তি থেকে গুরুতর ব্যথা পর্যন্ত হতে পারে।
ক্লান্তি: কিছু ব্যক্তি তাদের মাসিকের শুরুর দিনগুলিতে ক্লান্তি এবং শক্তির সাধারণ অভাব অনুভব করেন।
খাবারের আকাঙ্ক্ষা এবং ক্ষুধায় পরিবর্তন: মেয়েরা এবং মহিলারা মিষ্টি বা নোনতা খাবারের জন্য ক্ষুধা বৃদ্ধি, খাবারের আকাঙ্ক্ষা বা তাদের ক্ষুধায় পরিবর্তন অনুভব করতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাত: পিএমএস ঘুমের ধরণকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে অনিদ্রা বা ঘুমাতে অসুবিধা হতে পারে।
ব্রণ এবং ত্বকের সমস্যা: ত্বকের সমস্যা, যেমন ব্রণ বা তৈলাক্ততা বৃদ্ধি, মাসিকের আগে আরও বেড়ে যেতে পারে।
হজম সংক্রান্ত সমস্যা: কিছু মেয়েরা কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মতো হজমের লক্ষণগুলি অনুভব করতে পারে।
মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেন: হরমোনের ওঠানামা কিছু ব্যক্তির মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনকে ট্রিগার করতে পারে।
লিবিডোর পরিবর্তন: পিএমএস চলাকালীন কিছু মেয়ে এবং মহিলাদের জন্য যৌন কার্যকলাপে আগ্রহ বা যৌন ইচ্ছার পরিবর্তন ঘটতে পারে।
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে PMS এর সঠিক কারণ সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় না, তবে হরমোনের পরিবর্তন, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের ওঠানামা একটি ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়। যদি কোনও মেয়ে বা মহিলা মাসিকের আগে গুরুতর বা দুর্বল লক্ষণগুলি অনুভব করে যা তার দৈনন্দিন জীবনে উল্লেখযোগ্যভাবে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এই উপসর্গগুলি পরিচালনা করার সর্বোত্তম পদ্ধতি নির্ধারণ করতে সাহায্য করতে পারে, যার মধ্যে জীবনধারা পরিবর্তন, খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন, ব্যায়াম, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ।
উপরোক্ত সমস্যাগুলিতে আকুপাংচার চিকিৎসার প্রভাব
আকুপাংচার আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে প্রাচীন চীনে আবিষ্কৃত একটি ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা বর্তমানে সমস্ত পৃথিবীতে বহুল প্রচলিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা ১০০ টির ও বেশি রোগের জন্য আকুপাংচার চিকিৎসাকে সুপারিশ করা হয়েছে।
মাসিক পূর্ববর্তি জটিলতার ক্ষেত্রে আকুপাংচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে যেমন শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং অবসাদ দূরীকরণে আকুপাংচার কাজ করে। এছাড়া এ সময় শরীরে ব্যথা ও ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। ব্যথাজনিত যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রে আকুপাংচার একটি বহুল প্রচলিত ও বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও ইন্সমনিয়া ও মাইগ্রেন এর মত বেশ কিছু রোগের পরিপূর্ণ চিকিৎসা পাওয়া যায়।
মাসিক পূর্ববর্তি জটিলতা ও তাঁর চাপ কমাতে আকুপাংচার বিশেষ কার্যকরী । এছাড়া এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আকুপাংচার শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এক ধরণের উদ্দীপনা তৈরী করে। যার কারণে শরীরের ব্যথাযুক্ত স্থান গুলির মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা তৈরী হয় এবং ব্যথা ধীরে ধীরে প্রশমিত হতে থাকে। সুতরাং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত আকুপাংচার মাসিক পূর্ববর্তি জটিলতার বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
আকুপাংচার চিকিৎসার মূল ভিত্তি হলো শরীরের মাংসপেশি, ব্লাড ভেসেল, রক্তনালী, ইত্যাদি। আকুপাংচার পদ্ধতিতে রোগীর কশেরুকার যে লেভেলে সমস্যা আছে, আকুপাংচার পদ্ধতিটি সেই স্থানের আশেপাশে অবস্থিত চ্যানেলগুলোকে এর মাধ্যমে ইলেকট্রিক শক দিয়ে উদ্দীপিত করে।
এতে সেই স্থানে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং বিভিন্ন রকম হরমোন নিঃসরণ হয়। এর ফলে উক্ত স্থানের ব্যথা উপশম হতে থাকে। তাই মেয়েদের মাসিক পূর্ববর্তি জটিলতা সমস্যা কমাতে ও তা আরো সহজতর করতে বেশ সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
See More…
আইবিএস, ঘুম সমস্যা ও ডিপ্রেশন দূর করার সহজ উপায়- আকুপাংচার।