চুলকানি (Pruritus) কি ?
চিকিৎসা শাস্ত্রে চুলকানিকে প্রুরাইটাস বলা হয়। এর মানে হল একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি যার ফলে জায়গাটিতে আঁচড়াতে ইচ্ছে করে। চুলকানির বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। সবচেয়ে সাধারণ কারণটি হল শুষ্ক ত্বক। চুলকানির সময়ের ঘর্ষণের কারণে শুষ্ক এবং খসখসে ত্বকে চুলকানি এবং জ্বালা হয়। চুলকানির কারণের উপরে নির্ভর করে অন্যান্য উপসর্গও দেখা দিতে পারে, যেমন, জায়গাটি লাল হয়ে যাওয়া, ফোসকা পড়া, ফুসকুড়ি হওয়া এবং কখনও কখনও রক্তও দেখা যেতে পারে (অতিরিক্ত আঁচড়ানর জন্য)।
কারো ক্ষেত্রে স্থায়ী চুলকানির পিছনে স্বাস্থ্যের অন্য কারণও থাকতে পারে, যেমন চর্ম রোগ, সোরাইসিস, গর্ভাবস্থা, এবং খুবই সামান্য ক্ষেত্রে ক্যান্সার। দেখা গিয়েছে যে যাদের অনেক রকমের রোগ আছে, যেমন মধুমেহ, এলার্জি এবং হাঁপানি, তাদের চুলকানি বেশি হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমতে থাকে। এই কারণে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে চুলকানি বেশি দেখা যায়। এই গুলির মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ভাবে লাগানোর জন্য মলম এবং খাবার ওষুধ। ঘরোয়া চিকিৎসার পদ্ধতিও সাময়িক ভাবে স্বস্তি দিতে পারে।
চুলকানির উপসর্গ
চুলকানির অনুভূতি খুবই সাধারণ এবং সহজেই চেনা যেতে পারে। অবশ্য চুলকানির কারণ যদি অন্য কোনও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার সাথে জড়িত থাকে তাহলে জায়গাটিতে শুধু আঁচড়ালেই হবে না। চুলকানির সাথে সাথে এই গুলিও হতে পারে:
- জায়গাটি লালচে হয়ে যাওয়া
- প্রদাহ
- জ্বালা করা
- ফুলে যাওয়া
- শুষ্ক ত্বক
- খসখসে হয়ে যাওয়া
- ত্বক আঁশের মতন হওয়া
- ফোস্কা পড়া
- শরীরের অনেক জায়গায় চুলকানি হতে পারে, যেমন হাতে, মাথায় এবং পিঠে অথবা যৌনাঙ্গের এলাকাতে।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন এমন উপসর্গগুলো হল-
- তীব্র ও সবসময় চুলকানি হওয়া।
- যদি চুলকানির সঙ্গে রক্ত যায়।
- সংক্রমণ (ইনফেকশন) ঘটলে।
- মলদ্বারে চাকা থাকলে।
চুলকানির কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা
- অ্যালার্জি হয় এমন খাদ্য এড়িয়ে চলা।
- মলত্যাগ ও অতিরিক্ত ঘামের পর মলদ্বার ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখা।
- সুতি কাপড়ের ঢিলাঢালা অন্তর্বাস ব্যবহার করা।
- রঙিন, সুগন্ধিযুক্ত ও খসখসে টয়লেট পেপার ব্যবহার না করা।
- সুগন্ধি সাবান ব্যবহার না করা।
চুলকানি প্রতিরোধে আকুপাংচার ও ওজোন থেরাপি চিকিৎসাঃ
চুলকানি প্রতিরোধের আরো একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হলো আকুপাংচার। আকুপাংচার শরীরের মধ্যে এক ধরণের উদ্দীপনা তৈরী করে যা শরীরের স্নায়ু সরবরাহ বৃদ্ধি করে এবং কোষকে আরো সতেজ করে তোলে। আকুপাংচারের ফলে তা উক্ত স্থানগুলোকে আরো সক্রিয় করে এবং রক্তনালীর বাধাজনিত প্রবাহ সংক্রান্ত উপশমকারী হিসাবে কাজ করে।
বর্তমানে উন্নত বিশ্বে এই আকুপাংচার একটি যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং বর্তমানে এটি বহুল প্রচলিত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এছাড়া আকুপাংচার চিকিৎসায় ত্বকের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হয়। যার ফলে শরীরের ত্বক পরিষ্কার থাকে এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে আন্দোলিত হয়। এর ফলে শরীরে চুলকানি ও ফুসকুড়ি জাতীয় সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে আসে।
ওজোন সাওনা থেরাপিঃ চুলকানি প্রতিরোধের একটি যুগান্তকারী সমাধান হলো ওজোন সাওনা থেরাপি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি শরীরকে জীবাণুমুক্ত করে এবং মানবদেহের টিস্যুগুলোতে পৌঁছে যাওয়া অক্সিজেনের পরিমাণকে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করে। এটি ফিজিওথেরাপির একটি উন্নত পর্যায়। এটি বহির্বিশ্বে বহুল প্রচলিত এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে। ওজোন সাওনা থেরাপির মাধ্যমে শরীর অধিক কার্যকর হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্পূর্ণ নিরাপদ একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে জানা যায় এবং রক্তনালীর বাধাজনিত প্রবাহ রোগের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঔষধ বলে বিবেচনা করা হয়।
এই চিকিৎসায় শরীরের জমা টক্সিন বের হয় এবং শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। যার ফলে ত্বকের উপরিভাগে চুলকানির যে রোগগুলি রয়েছে সেগুলি অনেকাংশেই প্রতিরোধ হয়। এছাড়া ওজোন সাওনা থেরাপি চিকিৎসায় শরীরে অতিরিক্ত অক্সিজেনেশন প্রক্রিয়া তৈরি হয় এবং তার শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে আরো স্বাভাবিক করে শরীরেকে আরো কর্মক্ষম করে তোলে।
See More…