মাজা ব্যথা বা কোমর ব্যথা হয়নি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। প্রায় প্রতিটি মানুষই তার জীবদ্দশায় কম বেশি এই সমস্যায় ভুগেছেন। কোমর ব্যথা (Low Back Pain) আমাদের দেশের মানুষের অন্যতম সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যা, যা দীর্ঘসময় বসে থাকা, ভারী জিনিস তোলা, ভুল শারীরিক ভঙ্গি, পেশির টান, ডিস্ক-জনিত সমস্যা (যেমন: PLID) এমনকি মানসিক চাপ এসব কারণেই কোমর ব্যথা হঠাৎ বা ধীরে ধীরে দেখা দিতে পারে।
এই ব্যথা কেবলমাত্র অস্বস্তির সৃষ্টি করে না, বরং দৈনন্দিন কাজকর্ম, চলাফেরা, ঘুম এবং কর্মক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। কোমর ব্যথা অনেক সময় পায়ের দিকে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া (Sciatica), পেশিতে টান, শক্তভাব, বা হাঁটাচলায় অসুবিধা দেখা দিতে পারে। সঠিক মূল্যায়ন ও চিকিৎসা না হলে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
আমাদের জন্য সুসংবাদ হল- সমস্যার সঠিক নির্ণয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ও পরামর্শ, নিয়মিত ব্যায়াম, স্ট্রেচিং এবং জীবনধারায় পরিবর্তন আনলে অধিকাংশ কোমর ব্যথার সমস্যাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এর মধ্যে থেকে কোমর ব্যথা দূর করার ঘরোয়া বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। আজকের ব্লগে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
কোমর ব্যথা কেন হয়?
কোমর ব্যথা আজকাল খুবই সাধারণ একটি সমস্যা, যা বয়স, পেশা, লাইফস্টাইল এর কারণে হতে পারে। অনেক সময় ব্যথা হালকা ভাবে শুরু হলেও পরে তা দৈনন্দিন কাজ, ঘুম, এমনকি হাঁটাচলার উপরও প্রভাব ফেলে। কোমর ব্যথার প্রকৃত কারণ জানা থাকলে চিকিৎসা ও প্রতিরোধ- দুটিই অনেক সহজ হয়।
1. ভুল ভঙ্গিতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা (Poor Posture): কম্পিউটার, মোবাইল বা অফিস ডেস্কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা স্পাইনের স্বাভাবিক অ্যালাইনমেন্ট নষ্ট করে। ফলে কোমরের মাংসপেশি ও লিগামেন্টে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ।
2. মাংসপেশি বা লিগামেন্টে টান ধরা (Muscle Strain / Sprain): হঠাৎ ভারী কিছু তোলা, দ্রুত নড়া–চড়া, বা ব্যায়ামের ভুল টেকনিক ব্যবহার করলে কোমরের মাংসপেশিতে স্ট্রেন তৈরি হয়। এতে ব্যথা, শক্তভাব ও চলাচলে অস্বস্তি দেখা দেয়।
3. ডিস্ক সমস্যার কারণে নার্ভে চাপ (Slip Disc / Herniation): লম্বার স্পাইনের ডিস্ক যদি স্থানচ্যুত হয়ে নার্ভে চাপ দেয়, তাহলে তীব্র ব্যথা, ঝিনঝিনি, বা পা অব্দি ব্যথা এসব লক্ষণ দেখা যায়। এটি সায়াটিকার অন্যতম প্রধান কারণ।
4. সায়াটিকা নার্ভে Irritation বা Compression: সায়াটিক নার্ভে চাপ তৈরি হলে কোমর থেকে নিতম্ব হয়ে পুরো পা পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে। বসা, দাঁড়ানো বা হাঁটার সময় ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে।
5. আর্থ্রাইটিস বা স্পাইনাল ক্ষয় (Arthritis / Spondylosis): বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্পাইনের জয়েন্টে ক্ষয় শুরু হয়, ডিস্ক পাতলা হয় এবং জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে chronic low back pain দেখা দেয়, যা সকালে বেশি অনুভূত হয়।
6. অতিরিক্ত ওজন ও দুর্বল (Core Muscles): স্থূলতা স্পাইনের ওপর সরাসরি লোড বাড়ায়। একই সঙ্গে দুর্বল কোর মাংসপেশি থাকলে কোমর পর্যাপ্ত সাপোর্ট পায় না।
7. মানসিক চাপ ও ঘুমের সমস্যা: দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস মাংসপেশি টাইট করে দেয়। পাশাপাশি ঘুম কম হলে ব্যথা রিকভারি ধীর হয়ে যায়, ফলে chronic pain বেড়ে যেতে পারে।
মাজা ব্যথা বা কোমর ব্যথা যে কারণেই হোক না কেন, সঠিক চিকিৎসা করলে দ্রুত এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কোমর ব্যাথা নিরাময়ে শশী হাসপাতাল (আকুপাংচার) বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান (The Best Hospital For Low Back Pain Treatment)। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা আকুপাংচার চিকিৎসক ডা. এস. এম. শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কোন প্রকার ঔষধ ও অপারেশন ছাড়াই শশী হাসপাতালে কোমর ব্যথার চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন।
কোমর ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
কোমর ব্যথার চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত থাকেন। কারণ এর চিকিৎসা করতে যেয়ে অনেক সময় অপারেশনও করতে হয়। আবার অনেক দিন চিকিৎসা নেওয়ার পরেও দেখা গিয়েছে এই ব্যথা নিরাময় হচ্ছে না, ব্যথা আবার নতুন করে শুরু হয়ে থাকে। তবে কোমর ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়ে কিছু চিকিৎসা রয়েছে যেগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে অনেকটাই ভালো থাকে সম্ভব। নিম্নে সেই ঘরোয়া চিকিৎসার বিষয়গুলো প্রদান করা হলঃ
১. গরম পানি ও বরফের সেঁক দেওয়া
২. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা
৩. ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাদ্য বেশি গ্রহণ করা
৪. আদা, হলুদ, মেথি ইত্যাদি খাবার নিয়মিত খাওয়া
৫. নিয়ম করে হাঁটাচলা করা
উপরোক্ত ঘরোয়া উপায়গুলো মেনে চললে কোমর ব্যথা থেকে অনেক ক্ষেত্রেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আরও বিস্তারিত জানুনঃ কোমর ব্যথা কমানোর দ্রুত উপায়।
কোমর ব্যথা হলে কি কি করা যাবে না
কোমর ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক গুলো বিধিনিষেধ মেনে চলা জরুরী। এই ব্যথা মূলত আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের সাথে বেড়ে থাকে। তাই সেসব কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে যেগুলো করলে এ ব্যথা বেড়ে যায়। চলুন জেনে নেই সেই সকল বাধানিষেধ।
- ভারি কিছু বহন করা যাবে না
- শরীরের ওজন বাড়ানো যাবে না
- একভাবে দীর্ঘ সময়বসে থাকা যাবে না
- নরম বিছানা ব্যবহার করা যাবে না
- অনিয়মিত খাবার খাওয়া যাবে না, ইত্যাদি।
উপরক্ত বিধি নিষেধ গুলো মেনে চললে কোমর ব্যথা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সেই সাথে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম ও আধুনিক কোমর ব্যথার চিকিৎসা দিয়ে আসছেন ডা. এস. এম. শহিদুল ইসলাম। তার তত্বাবধানে আকুপাংচার ও কম্বিনেশন চিকিৎসার মাধ্যমে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পেয়েছেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য রোগী।
পরিশেষে
কোমর ব্যাথা নিয়ন্ত্রণে ঘরোয়া উপায়গুলি সহায়ক মাত্র । তবে এগুলোই শেষ চিকিৎসা নয়, ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, পায়ে ছড়িয়ে যায়, অসাড়তা বা দুর্বলতা অনুভূত হয় তাহলে ঘরোয়া উপায়ের পাশাপাশি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
ঔষধ ও অপারেশন বিহীন কোমর ব্যথার চিকিৎসায় আকুপাংচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের অন্যতম আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ডা. এস. এম. শহীদুল ইসলাম দীর্ঘদিন কোমর ব্যথার চিকিৎসা করে আসছেন। দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতায় আকুপাংচার চিকিৎসা হতে পারে আপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য।