সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বেই ক্যান্সার (Cancer) অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর পরিধিও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। একসময় উন্নত বিশ্বের রোগ হিসেবে পরিচিত ক্যান্সার বিষাক্ত ছোবল এনেছে আমাদের দেশেও। ক্রমবর্ধমান ক্যান্সার রোগী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য তৈরি করছে নানামুখী চাপ ও সংকট।
বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮১ জন নতুন ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৭ জন রোগী মারা যায়।
আমাদের দেশে বিলম্বে ক্যান্সার নির্ণয় হয় বলে পুরোপুরিভাবে রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ, এটি শরীরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে। ক্যান্সারের ব্যথা (ক্যান্সার পেইন) একটি মারাত্মক ও যন্ত্রনাদায়ক উপসর্গ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথা উপশমের লক্ষ্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার ডে পালিত হয় অক্টোবরের দ্বিতীয় শনিবার। সে হিসাবে এবার ১০ অক্টোবর এ দিবস পালন করা হয়।
ক্যান্সার এর ব্যথার কারণ
- ক্যানসারের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাংসপেশির খিঁচুনি, হাত-পা ফুলে যাওয়া, লিম্ফোডিমা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বেডসোর ইত্যাদি
- শল্যচিকিৎসাত্তোর ক্ষতের কারণে
- রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মুখে ও খাদ্যনালিতে ঘা হওয়া
- নার্ভ কমপ্রেশন, নার্ভ ইনজুরি, ক্যানসারের কারণে মাথার ভেতরের সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের চাপ বেড়ে গেলে ব্যথা হয়
- হাড় ও জোড়া ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া, ক্ষয় হওয়া ও আর্থ্রাইটিসের জন্য
ক্যান্সার এর ব্যথা (Cancer Pain) নিরাময়ের জন্য করণীয়
- রোগীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা
- ব্যথার নির্দিষ্ট কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া
- মানসিক চিকিৎসা প্রদানের সঙ্গে ব্যথার কারণ বিশ্লেষণ করা
- প্রথমে সাধারণ ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করা
- এর পরের ধাপে এনএসআইডি (NSAIDs) যোগ করা
- সবশেষে প্রয়োজনে মরফিন ও প্যাথেড্রিন–জাতীয় ওষুধ দেওয়া
- নির্দিষ্ট কারণের জন্য যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া
ক্যান্সারের ব্যথা (Cancer Pain) নিরাময়ে আকুপাংচার চিকিৎসা
আকুপাংচার হল একটি ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা অনুশীলন যা বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় এবং থেরাপিউটিক প্রভাবকে উদ্দীপিত করার জন্য শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলিতে পাতলা সূঁচ দিয়ে উদ্দীপনা তৈরি করা হয়। যদিও আকুপাংচার সাধারণত বিভিন্ন স্বাস্থ্য অবস্থার জন্য ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সারের ব্যথা জনিত রোগের ক্ষেত্রে আকুপাংচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই সূঁই অনেক পাতলা যা শরীরের গভীরে সামান্য চাপে প্রবেশ করে এবং শরীরকে উদ্দীপিত করে।
ক্যান্সারের ব্যথা (Cancer Pain) চিকিৎসায় আকুপাংচারের কার্যকারিতার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা রয়েছে। আকুপাংচারের প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। জীবনধারা পরিবর্তন এবং খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তনের সাথে সাথে আকুপাংচার চিকিৎসা গ্রহণের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং নার্ভের জটিলতা দূর করে। আকুপাংচার অনুশীলনকারীরা ক্যান্সারের ব্যথা উপশম করতে মুখ, মাথা এবং ঘাড়ের নির্দিষ্ট আকুপাংচার পয়েন্টগুলি লক্ষ্য করে আকুপাংচার সুঁই প্রদান করা হয়। এই পয়েন্টগুলি ব্যথা উপশম এবং শিথিলকরণের সাথে যুক্ত।
আকুপাংচার শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক এন্ডোরফিন নি: সরণকে প্রচার করে ক্যান্সারের পরিচালনা করতে সাহায্য করে। এটি প্রভাবিত এলাকায় পেশী টান এবং প্রদাহ কমাতে পারে। আকুপাংচার দ্বারা টিএমজে (TMJ) সম্পর্কিত ব্যথার অবস্থার উপশম করা যেতে পারে, কারণ এটি চোয়ালের পেশী শিথিল করতে এবং চোয়ালের অঞ্চলে ব্যথা এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করতে পারে। চোখে ব্যথা প্রায়ই উদ্বেগ এবং চাপের সাথে যুক্ত। আকুপাংচার এই মানসিক কারণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা রোগীর জন্য সামগ্রিক ক্যান্সারের ব্যথার অভিজ্ঞতাকে আরও আরামদায়ক করে তোলে। এছাড়া আকুপাংচার ব্যথার সংকেতকে মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধা দিতে সাহায্য করতে পারে, ক্যান্সারের ব্যথার জন্য স্থায়ী ব্যথা উপশম প্রদান করে।
See more…