মুখের হাড়ের সমস্যা

মুখের হাড়ের সমস্যা (Temporomandibular Joint Dysfunction) নিরাময় আকুপাংচারের ভূমিকা

মুখের হাড়ের সমস্যা কি? (Temporomandibular Joint Dysfunction) 

খাবার চিবানো, মুখ খোলা–বন্ধ বা নড়ানোর জন্য মুখের একমাত্র যে অস্থিসন্ধি আমরা ব্যবহার করি, তাকে মুখের হাড়ে সমস্যা বা টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট (TMJ) বলে। কানের সামনে মুখের দুই পাশে নিচের চোয়াল ও ওপরের চোয়ালের হাড় সংযুক্ত হয় পেশি, লিগামেন্টস ও ডিস্কের সাহায্যে বল ও সকেট তৈরির মাধ্যমে।

এই অস্থিসন্ধিতে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। একমাত্র এই সন্ধির কারণেই আমাদের মুখ খোলে, বন্ধ হয় বা নড়ে। এই সন্ধির সমস্যায় আমাদের দৈনন্দিন জীবন হয়ে উঠতে পারে অসহনীয়। অত্যন্ত কার্যকর এই জয়েন্ট যে সব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

খাবার চিবাতে, মুখ খুলতে বা নাড়াতে, হাই তুলতে, কথা বলতে কচ্ কচ্ বা টিক টিক অস্বাভাবিক শব্দ হতে পারে, কানের সামনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। চিকিৎসা না পেলে এমন সমস্যার তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ও এক পর্যায়ে মুখ খোলা দুষ্কর হয়ে পড়ে।

এই জাতীয় সমস্যায় কোনো চাক্ষুস অস্বাভাবিকতা যেমন ব্যথার স্থানটি ফোলা বা মুখের মধ্যকার কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না বলে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে অপেক্ষা করে। এমন সমস্যায় ভয় পাওয়া বা হতাশ হওয়ার যেমন কিছু নেই আবার অবহেলা করারও কোনো সুযোগ নেই।

আকুপাংচার চিকিৎসার মাধ্যমে মুখের হাড়ে সমস্যা বা টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট (TMJ) ডিসফাংশন ভালো করা যায়। এটি একটি প্রাচীন চীনা পদ্ধতি। Temporomandibular Joint Dysfunction সমস্যা সারা বিশ্বে অনেকেরই হয়ে থাকে, আর আকুপাংচার চিকিৎসা এই রোগ নিরাময়ের জন্য বেশ সুনাম অর্জন করেছে।

বাংলাদেশের একজন সেরা আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ডা. এস. এম. শহিদুল ইসলাম এর চিকিৎসা নিয়ে Temporomandibular Joint Dysfunction থেকে মুক্তি পেয়েছেন অসংখ্য রোগী। তার মতে এ রোগ এর সঠিক চিকিৎসা করলে দ্রুত নিরাময় করা যায়।

টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট (TMJ) ডিসফাংশন রোগের সৃষ্ট সমস্যা সমূহ

  • Temporomandibular Joint Dysfunction সমস্যা হলে খাবার চিবোতে, মুখ খোলা–বন্ধ বা নাড়াতে, হাই তুলতে, কথা বলতে কচকচ বা টিকটিক অস্বাভাবিক শব্দ হতে পারে, কানের সামনে মুখের দুই পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। চিকিৎসা না করালে একপর্যায়ে মুখ খোলাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। অনেক সময় হাই তুললে বা বড় করে মুখ হাঁ করলে মুখ আটকে যেতে পারে। ঘুমের সমস্যা, হতাশা, মাথাব্যথা, কানব্যথাও হতে পারে।
  • যাদের ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি-এর অভাব আছে । এই উপাদানের অভাবে সমগ্র শরীরের হাড় ক্ষয় হতে পারে। বেড়ে ওঠার বয়সে বা বৃদ্ধ বয়সে বিষয়টি অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। অনেক সময় হরমোন বা অতি পুষ্টিহীনতার কারণেও এমন হতে পারে।
  • ওপরের ও নিচের দাঁতের মধ্যকার সম্পর্ক অস্বাভাবিক হলে, অর্থাৎ আমরা যখন মুখ বন্ধ করি তখন ওপরের ও নিচের দাঁতগুলো সাধারণত একটা নির্দিষ্ট জায়গাতে মিলিত হয়, এর তারতম্য হলেই নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। কৃত্রিম দাঁত সংযোজনের সময়টিও বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ।
  • যারা নিজের অজান্তেই একদিকে চিবাই বা যাদের এক দিকের দাঁত নেই অথবা একদিকের দাঁতে সমস্যার কারণে বিপরীত দিক দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে।
  • মুখের দুর্ঘটনা বা আঘাতের পরবর্তী জটিলতা থেকে।
  • যারা দীর্ঘ সময় কান ও কাঁধের মধ্যে ফোন চেপে বাঁকা হয়ে কথা বলেন, বিশেষ করে বাইকারদের মধ্যে ইদানীং এই অভ্যাস চোখে পড়ে।

মুখের হাড়ের সমস্যা বা (TMJ) ডিসফাংশন নিরাময় আকুপাংচারের ভূমিকা

আকুপাংচার হল একটি ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধের অনুশীলন যা শক্তির প্রবাহকে উদ্দীপিত করতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও মঙ্গলকে উন্নীত করার জন্য শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলিতে পাতলা সূঁচ প্রবেশ করানোর সাথে জড়িত। আকুপাংচার সাধারণত ব্যথা ব্যবস্থাপনা এবং স্ট্রেস রিলিফের সাথে যুক্ত, এটি মুখের হাড়ের সমস্যা সহ বিভিন্ন চিকিৎসা অবস্থার চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়েছে।

মুখের হাড়ের সমস্যাগুলি বিস্তৃত সমস্যাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, যেমন ফ্র্যাকচার, বিকৃতি, এবং চোয়াল, গালের হাড় এবং কপাল সহ মুখের হাড়গুলিকে প্রভাবিত করে এমন অবস্থা। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে একত্রে কাজ করে এই অবস্থার চিকিৎসায় আকুপাংচারকে একটি সহায়ক থেরাপি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিবেচনা করার জন্য কিছু মূল বিষয় রয়েছে

হোলিস্টিক অ্যাপ্রোচ: আকুপাংচার হল সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ধারণার উপর ভিত্তি করে এবং এটি শুধুমাত্র শারীরিক উপসর্গগুলিই নয়, শরীরের শক্তির অন্তর্নিহিত ভারসাম্যহীনতা বা “কিউই”-এর সমাধান করে। কিউই-এর প্রবাহ উন্নত করে এবং শরীরের শক্তির ভারসাম্য বজায় রেখে, আকুপাংচারের লক্ষ্য শরীরের নিজেকে নিরাময় করার ক্ষমতা বাড়ানো।

ব্যথা ব্যবস্থাপনা: আকুপাংচার তার বেদনানাশক বৈশিষ্ট্যের জন্য বহুল পরিচিত। মুখের হাড়ের সমস্যাগুলির জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকর। সূঁচ সন্নিবেশ এন্ডোরফিন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

ফোলা এবং প্রদাহ কমানো: আকুপাংচার মুখের অংশে ফোলাভাব এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি মুখের হাড়ে সমস্যা বা টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট (TMJ) রোগের মতো অবস্থার জন্য বিশেষভাবে উপকারী, যা মুখের ব্যথা এবং ফোলা হতে পারে।

রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা: ক্ষতিগ্রস্ত বা ভাঙা হাড় নিরাময়ের জন্য উন্নত রক্ত সঞ্চালন অপরিহার্য। আকুপাংচার ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় রক্ত ​​প্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে, সম্ভাব্য নিরাময় প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে।

স্ট্রেস হ্রাস: মুখের হাড়ের সমস্যাগুলি মোকাবেলা করা চাপযুক্ত হতে পারে। আকুপাংচার স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে, যা আরও ভাল সামগ্রিক সুস্থতায় অবদান রাখতে পারে এবং পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য সাহায্য করে।

আকুপাংচারের কোনো পরিচিত নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, যা বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আকুপাংচার হল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা শরীরের নির্দিষ্ট অংশকে লক্ষ্য করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

Leave a Reply

Receive the latest news

Subscribe To My Weekly Newsletter

Get notified about new articles